প্রেমের বিয়ে ভাঙ্গে কেন বা প্রেমের বিয়ে টিকে না কেন

প্রেম ভালোবাসার গল্প যেন বিচ্ছেদেই পূর্নতা পায়!  যে প্রেম ভালবাসা পূর্নতা পেয়েছে এমন কোন কাহিনি-ই আজো জনপ্রিয়তা পেয়েছে বা মানুষের হৃদয়-কে স্পন্দিত করতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই! অনেকেই বলেন প্রেমের মধুর পরিনতি হলো বিয়ে! কিন্তু বিষয়ের পড়ে এই প্রেমিক যুগল কতটা সুখী হয়েছে বা সুখে আছে তার খোঁজ কে-ই বা কে রাখে! আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে আমরা একটি বিষয় নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি যে আসলেই কি প্রেম করে বিয়ে করলে কি সুখি হওয়া যায়? এ যেন গভীর একটি প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে!  আজ আমার নিজের চিন্তাধারা থেকে বর্ণনা করতে চলেছি প্রেম করে বিয়ে করলে কি সুখি হওয়া যায় বা প্রেম করে বা ভালোবেসে বিয়ে করলে কেন টিকে না! যদিও আমি বিবাহিত নয়!
প্রেমের বিয়ে ভাঙে কেন
একটি সত্যিকারের প্রেমিক যুগল-কে দেখলে বোঝা যায় যায় ভালোবাসা আসলে কি জিনিস! একটি বেয়ারা ছেলেও একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে নম্র, ভদ্র এবং বাধ্য শিশুতে পরিনত হয়। যে মানুষটি একদিন বন্ধুদের কাছে গলা ফাটিয়ে বলতো প্রেম ভালোবাসা আমার জন্য না বা আমি এসব একদম-ই পছন্দ করি না! হটাৎ সেই ছেলেটি বা মেয়েটিকে দেখা যায় কারো প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে! তখন তারা বন্ধুদের কথা ভূলেই যায়। এসব নিয়ে বন্ধুরা সুযোগ পেলেই বিভিন্ন টিটকারি মূলক কথা বার্তা বলছে কিন্তু সে সব যেন কর্ণগোচর-ই হচ্ছে না তাদের! এটা কি কোন খারাপ বিষয়?  না অবশ্যই না কারন যদি এটি কোন খারাপ বিষয় হতো তাহলে কেনইবা গুনিজনেরা বলবে যে প্রেম হলো ঈশ্বরের দান! এবং এগুলো নাকি সরাসরি স্বর্গ থেকেই ইমপোর্ট হয়!

প্রেমিক যুগলের এটাই ঠিক থাকে না কখন দিন আর কখন রাত! সারা দিন রাত একে অপরের ভাবনায় মগ্ন। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় ফোনালাপে-ই। একে অপরের নিকট নিজেকে পছন্দসই উপস্থাপন করাও কিন্তু এখানে একটি মূখ্য বিষয় হয়ে যায়। এরা একে অপরের মান ভাঙ্গাতে কত কিছুই না করে। এর মধ্যে অন্যতম একটি উক্তি হলো," তুমি না খেলে আমিও খাব না"


তাদের এই প্রেম অনেক সময় শেষ পরিনতি পায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় "কলি ফুটে ফুল হওয়ার আগেই তা ঝড়ে যায়"। আবার অনেকের প্রেমেরই যে শেষ পরিনতি পায় এই শেষ পরিনতি টা আসলে কি?! এই শেষ পরিনতিই হলো বিয়ে। যেমন জীবনের শেষ পরিনতি মৃত্যু তেমনি প্রেমের শেষ পরিনতি বিয়ে। তবে এখানে একটি ভাবনার বিষয় কিন্তু থেকেই যায়,  তাহলে বিয়েকে কেন প্রেমের শেষ পরিনতি বলা হয়?  বিয়ে হলেই কি প্রেম শেষ! যা এসব কথায় এখন যাব না।

যখন ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়া হয়ে যায় তখন আর কিসের ভয়। এখন তো ও শুধুই আমার! কারন তখন তারা সামাজিক ও আইনগত দিক থেকে একে অপরের সাথী!  বিয়ের আগে একে অপরের সম্পর্কের মূল্য ছিল মনের থেকে। কিন্তু এখন তা আরো শক্ত অবস্থান নেয়! কারন কোন তৃতীয় পক্ষ চাইলেই তাদের আলাদা করতে পারবে না!

তাহলে এই গভীর সম্পর্কে কিভাবে বিচ্ছেদের সানাই বাজে!  কেনই প্রেম করে বিয়ে করলে কি সুখি হওয়া যায় এই প্রশ্ন তৈরি হলো। আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বলতে-ই পারি যে প্রেম ভালোবাসার বিয়ে টিকে না! কারন অধিকাংশ প্রেমের বিয়েতেই বিচ্ছেদ ঘটেছে দেখা যায়! তবে প্রেম করে বিয়ে করে সুখী হয়েছেন এদের সংখ্যাও কম নয়।

আমার মতে প্রেমের বিবাহের বিচ্ছেদ এর প্রধান কারন তারা মনের ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে তখন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়। কারন এতদিন এক অপরকে ব্রেকফাস্ট করতে করতে মেসেজ দিয়েছে " জানু ব্রেকফাস্ট করছো" আর এখন মেয়েটিকে সেই জানুর জন্য নিজ হাতে ব্রেকফাস্ট তৈরি করে দিতে হচ্ছে। আবার সঠিক সময় ব্রেকফাস্ট না পেলেও সমস্যা প্রথম কয়েক দিন ছেলেটি মানিয়ে নিতে পারলেও এক সময় ছেলেটা প্রশ্ন করে বসে বেলা ১০ টা বেজে গেল কখন সকালে নাস্তা করবো। তখন আর ব্রেকফাস্ট আর ব্রেকফাস্ট থাকে না। হয়ে যায় সকালের খাওন। আবার ছেলেটিকে সকালের খাওন টা যোগার করতে হবে না হলে হবে কি করে। এরপরে শুরু হয় এই লাগবে ওই লাগবে। যখন আর্জি মত কাজ হবে না তখনই মনে বাসা বাধতে শুরু করে "তাহলে কি এতোদিনের ভালোবাসা ভূল ছিল? এতো প্রতিশ্রুতি কি তাহলে মিথ্যা" মূলত এখানে দুজনের মাঝে সমঝোতার অভাব দেখা যায়। 

স্বভাবতই একজন পুরুষ চায় তার স্ত্রী আর সকল কথা শুনে চলবে। তার পছন্দ অপছন্দ বুঝে চলবে অন্য আর পাঁচটা মহিলার মতো। কিন্তু প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। দুজনের ভিতরেই সেচ্ছাচারী ভাব থেকেই যায়। শুরু হয় মতবিরোধ। কারন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে তাদের প্রেম চলাকালীন সময়ের আকাশ কুসুম চিন্তা গুলো আর বাস্তবায়ন হয় না।

এরপর আসা যাক বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে। প্রেমে সময় একে অপরকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। যা বিয়ের পরবর্তী সময় আর পূরন হয় না। তুমি না বলেছিলে বিয়ের পড়ে এই দিবে ওই দিবে। হানিমুনে চান্দের দেশে নিয়ে যাবে! কই? কই সেগুলো তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে তাইনা!  আমাকে ঠকিয়েছো তুমি!

যে মেয়েটা ছেলেটার সাথে দেখা করতে আসতো ঝকমকে ড্রোস পড়ে। ঠোটে লিপস্টিক চোখে কাজল, নখে নেলপলিশ দিয়ে এবং সুন্দর ভাবে মেকাপ করে অপ্সরা সেজে। আজ তার মুখের মেকাপ নেই তাই শ্যামলা মুখখানা দেখতে হচ্ছে। আর মেকাপের বদলে মুখে বাসন মাজতে গিয়ে কালি লেগে গেছে এখন আরো বেমানান লাগছে। নখ গুলোও আর আগের মত নেই! তাই আজকের এই মেকাপ ছাড়া বৌয়ের মাঝে যেন সেই স্বর্গের অপ্সরা প্রেমিকাকে খুঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এরপরই আসে পরিবার।  এরেঞ্জ ম্যারেজে বাবা-মা আত্মীয় স্বজনরা দেখে শুনে বিয়ে দেন। কিন্তু লাভ ম্যারেজে তা হয় না। তাই তাদের অমতে বিয়ে করার কুফল গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া তাদের কর্তব্য হয়ে পরে। সংসার ক্ষেত্রে সমস্যা আসবেই এটাই স্বাভাবিক। পরিবার পরিজনের দেখা মেয়েকে বিয়ে করলে তারা সে সকল সমস্যা গুলো মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু লাভ ম্যারেজে পরিবার চায় লাগুক আগুন। আর সেই আগুনে ঘি ঢালাই হচ্ছে তাদের কাজ। ছেলের বউকে অযোগ্য প্রমান করাই এখন মূখ্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় লাভ ম্যারেজের বউটি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পরিবার তা মানছে না।

ছেলেটিও তার দায়িত্ব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সে তার প্রতিশ্রুতি গুলো বাস্তবে রুপ দিতে পারলেও এখন তার কাছে ঝামেলা মনে হতে শুরু করে। মূলত প্রেমের বিয়ের বিচ্ছেদের জন্য উভয় পক্ষই সমান ভাবে দায়ী থাকে।

এসব সমস্যার কারনে বিয়ে পূর্ববর্তী প্রেমিক যুগল বিয়ের পরে আর একে অপরের সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না। তেই মধুর সম্পর্কে আজ নিম তেতো হয়ে গিয়েছে। এখন একজন আরেকজনের মুখ দেখাই কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। আর একই ছাদের নিচে থাকাটা যেন অস্বস্তিকর লাগছে। এছাড়াও প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে কেউই ততোটা ভাবে না। কারন আগের সেই ভালোবাসাই যখন নেই তখন দায়িত্বটা তো তুচ্ছ বিষয়। এবং এই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তকে ফলপ্রসূ করতে কাজ করে নিকটাত্মীয়রা। এমনকি তাদের মা-বাবা ও। এক সময় তারা দুজন সম্পুর্ন ভিনগ্রহের প্রানী হয়ে দাড়ায়। জেদ আর অভিমান মিলে একাকার হয়ে দুজনের ভিতর এক দূর্ভেদ্য দেওয়াল তৈরি হয়। যা ভাঙ্গা আর তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url