জেনে নিন 1G,2G,3G,4G নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্য এবং বিস্তারিত

আমরা বর্তমানে যে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছি শুরুতেই কি তা এমন ছিল? অবশ্যই না।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে মোবাইল ফোনের বর্তমান  রূপ লাভ করেছে।  উন্নয়নের এক একটি পর্যায় বা ধাপ কে মোবাইল ফোনের প্রজন্ম নামে অভিহিত করা হয়।1940 সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সর্বপ্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে। সে সময় মোবাইল ফোনের কার্যক্ষমতা ছিল খুবই কম দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং সীমিত এলাকাভিত্তিক। হাজার 979 সালে এশিয়ার সর্ববৃহৎ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি জাপানের এনটিটিসি(Nippon Telegraph and telephone Corporation)  বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মোবাইল ফোন বা সেলুলার ফোন উৎপাদন শুরু করে।
description of network type 

 বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন থেকে বর্তমান পর্যন্ত কোন উন্নতির সময়কালকে চারটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়।

প্রজন্ম চারটি হল-
১- প্রথম প্রজন্ম (first generation -1G)
২- দ্বিতীয় প্রজন্ম(second generation -2G)
৩- তৃতীয় প্রজন্ম(third generation -3G)
4- চতুর্থ প্রজন্ম(4th generation -4G)

 চলুন তাহলে এই চার প্রজন্মের বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-

 1⃣প্রথম প্রজন্ম(first generation -1G)( সময়কাল 1979 থেকে 1990)-
1G mobile phone photo 

 হাজার 979 সালের পূর্ব পর্যন্ত কারিগরি সীমাবদ্ধতা ও নিরাপত্তার অজুহাতে মোবাইল ফোন সাধারণ জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিলনা 979 সালে এশিয়ার সর্ববৃহৎ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি জাপানের NTTC(Nippon Telegraph and telephone Corporation)  বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মোবাইল ফোন বা সেলুলার ফোন উৎপাদন শুরু করে।  হাজার 983 সালের যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম মটোরোলা নামে hand-held মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয়।

 প্রথম প্রজন্মের মোবাইল ফোন গুলির বৈশিষ্ট্য-
১- রেডিও সিগন্যাল হিসেবে অ্যানালগ সিস্টেম এর ব্যবহার।
২- কম ব্যান্ডের সিগন্যাল ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার।
৩- চ্যানেল এক্সেস FDMA(Frequency division multiple access)  পদ্ধতির।
৪-Handoff  সুবিধা না থাকা,অর্থাৎ সংযোগ থাকা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থান পরিবর্তন হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৫- সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রোপ্রসেসর প্রযুক্তির ব্যবহার।
৬- আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা না থাকা।
৭- সমসাময়িক অন্যান্য ফোন অপেক্ষা আকারে ছোট ও ওজনে হালকা কিন্তু বর্তমান মোবাইল হ্যান্ডসেট অপেক্ষা আকারে অনেক বড় ও ওজনে ভারী।
৮- সিম কার্ড ব্যবহারের সুবিধা না থাকা।

 এগুলো হলো প্রথম প্রজন্মের মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য।

2⃣ দ্বিতীয় প্রজন্ম(second generation -2G)( সময়কাল 1991 থেকে 2000)-
2G mobile phone photo 

  এনালগ ট্রান্সমিশন এর পরিবর্তে ডিজিটাল ট্রান্সমিশন এর মাধ্যমে দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন চালু হয়। এসময় মোবাইল টেকনোলজির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো GSM(Global system for mobile communication)  এবং CDMA(code division multiple access). 1991 সালে জিএসএম এর সুবিধা নিয়ে সর্বপ্রথম দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোনের সূচনা। মোবাইল হ্যান্ডসেট এর আকৃতি ও ওজন উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে হাজার 998 সালে ফিনল্যান্ড এবং 1999 সালে ফিলিপাইনে সর্বপ্রথম মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন কাজ শুরু হয়। হাজার 999 সালে জাপানের এনটিটি ডোকোমো কোম্পানি সেলুলার ফোনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করে। 2000 সালে সর্বপ্রথম ফিনল্যান্ডের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দৈনিক নিউজ হেডলাইন ও বিজ্ঞাপন প্রচার করে।

 দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য-
১- নেটওয়ার্কের রেডিও সিগন্যাল হিসেবে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার।
২- নেটওয়ার্ক জিএসএম এবং সিডিএমএ স্ট্যান্ডার্ড।
৩- প্রথম প্রজন্মের তুলনায় উচ্চ ব্যান্ডের সিগন্যাল ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার।
৪- চ্যানেল অ্যাক্সেস FDMA,TDMA,CDMA   পদ্ধতির।
৫- সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা থাকা।
৬- জিএসএম স্ট্যান্ডার্ডে হ্যান্ডসেটে যেকোন মোবাইল অপারেটরের কোম্পানির নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা বা সিম কার্ড ব্যবহারের সুবিধা। তবে সিডিএমএ স্ট্যান্ডার্ড এসব সুবিধা ছিল না।
৭- হ্যান্ড অফ সুবিধা চালু। অর্থাৎ সংযোগ থাকা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থান পরিবর্তন হলেও সংযোগও অবিচ্ছিন্ন থাকা।
৮- এই প্রজন্ম থেকেই প্রিপেড সিম চালু হয়।
৯- এসএমএস এমএমএস এবং ভয়েস মেইল ব্যবহারের সুবিধা।
১০- মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন।
১১- সমসাময়িক অন্যান্য সকল ধরনের ফোন অপেক্ষা আকারে ছোট ও ওজনে হালকা।

 উপরোক্ত এই সকল বৈশিষ্ট্য দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোনে বিদ্যমান ছিল।

3⃣ তৃতীয় প্রজন্ম(3rd Generation-3G)( সময়কাল 2001 থেকে 2008)-
three G mobile phone photo

  2001 সালে জাপানের এনটিটি ডোকোমো কম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন চালু করে। দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোনের প্রধান প্রযুক্তিগত পার্থক্য হলো সার্কিট সুইচিং ট্রান্সমিশন এর পরিবর্তে প্যাকেট সুইচিং ডেটা ট্রান্সমিশন ব্যবহার করা।
2001 সালের শেষের দিকে w-cdma প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভিত্তিতে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোনের উৎপাদন শুরু হয়। থ্রিজি বা তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে,GSM,EDGE,UMTS এবং CDMA 2000  প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত। থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে DECT,WIMAX,Voice call,Video call  ইত্যাদি সার্ভিস প্রদান করা সম্ভব।

 তৃতীয় প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মোবাইলে স্টান্ডার্ড হল-
UMTS(Universal Mobile telecommunication system)
WCDMA (wideband code division multiple access)
EDGE(enhanced data rates for GSM evolution)
HSDPA(high speed downlink packet access)

 তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক এর বৈশিষ্ট্য-
১- ডেটা ট্রান্সমিশন এক্ষেত্রে প্যাকেট সুইচিং ও সার্কিট সুইচিং পদ্ধতির ব্যবহার।
২- পূর্বের তুলনায় উচ্চ ব্যান্ডের সিগন্যাল ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার। লেটার ট্রান্সফার রেট টু এমবিপিএস এর বেশি।
৩- চ্যানেল  এক্সেস TD-SCDNA,TD-CDMA  পদ্ধতির।
৪-  জিপিআরএস( জেনারেল প্যাকেট রেডিও সিস্টেম) স্ট্যান্ডার্ডের ব্যাপক উন্নয়ন।
৫- নেটওয়ার্কে GSM,EDGE,UMTS এবং CDMA 2000 স্ট্যান্ডার্ড এর ব্যবহার।
৬- ভিডিও কলের ব্যবহার শুরু হওয়া।
৭- ব্যাপক আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা পাওয়া।
৮-  মোবাইল ব্যাংকিংয়,ই- কমার্স,ইমেইল এবং অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক সার্ভিস প্রদান।
 উপরোক্ত এগুলো হচ্ছে তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক এর বৈশিষ্ট্য।

4⃣ চতুর্থ প্রজন্ম(4th generation -4G)( সময়কাল 2009 থেকে বর্তমান পর্যন্ত)-
4G mobile phone photo

 চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ফোনের প্রধান প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য হলো সার্কিট সুইচিং বা প্যাকেট সুইচিং ডেটা ট্রান্সমিশন এর পরিবর্তে ইন্টারনেট প্রটোকল ভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার। ফলে LAN,WAN,VOIP,Internet   প্রভৃতি সিস্টেম এ প্যাকেট সুইচিং এর পরিবর্তে প্রটোকল ভিত্তিক ভয়েস যেটা ট্রানস্ফার সম্ভব হচ্ছে। দ্রুত চলনশীল ডিভাইসের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ডাটা ট্রান্সফার রেট 100 এমবিপিএস এবং স্থীর ডিভাইসের ক্ষেত্রে 1gbps আশা করা হচ্ছে। মোবাইল ওয়েব অ্যাক্সেস,আইপি টেলিফোনি,গেমিং সার্ভিসেস, high-definition মোবাইল টিভি, ভিডিও কনফারেন্সিং, থ্রিডি টেলিভিশন ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফোরজি মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

 ফোর-জি প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নরূপ-
১- উচ্চগতির ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড সার্ভিস, প্রকৃত ডাটা ট্রান্সফার রেট সর্বোচ্চ 20 এমবিপিএস।
৩- ত্রিমাত্রিক ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা।
৪- আইপি নির্ভর ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক সিস্টেম।
৫-Bluetooth,WLAN, GPS(Global positioning system), WCDMA, GRRS  প্রভৃতি ওয়ারলেস সিস্টেম সাপোর্টের জন্য নেটওয়ার্কে SDR (software defined radio)  প্রযুক্তির ব্যবহার।

 উপরোক্ত সকল হচ্ছে ফোরজি নেটওয়ার্ক এর বৈশিষ্ট্য।

 উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এটুকু বুঝতে পারলাম যে ক্রমান্বয়ে আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক কতটা উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। এসকল প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে।
Next Post Previous Post