রচনা: অধ্যবসায়

রচনা:অধ্যবসায়।
অধ্যবসায়

ভূমিকা :
“জীবনের প্রতি অধ্যায়
 চাই দৃঢ় প্রত্যয়,
চাই ঘাত-প্রতিঘাত
লৌহকঠিন সত্য হৃদয়।”

কবিতার এ ছত্রেই লুকিয়ে আছে অধ্যবসায়ের সারাংশ। বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, 'Our life is full of struggle.' জীবনে সাফল্য লাভের একমাত্র হাতিয়ার হলাে অধ্যবসায়। এটি মানষের একটি মহৎ গুণ। তাই জগতে যে অধ্যবসায়ী সে-ই জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারে।
কোনাে কাজে সাফল্য লাভের জন্য বারবার চেষ্টা করার নাম অধ্যবসায়। তাইতাে কবির উচ্চারণ,

“পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
একবার না পারিলে দেখ শতবার।”

কবির এ উদ্দীপনামূলক বাণীই সাহস যােগায় তাকে। সত্যিকার অর্থে কাজে বিফলতা সত্ত্বেও অসাধ্য কাজটি সুসম্পন্ন করার জন্য অবিচল উৎসাহ, দৃঢ় সংকল্প, অসীম ধৈর্য সবই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া পৃথিবীতে কোনাে মহৎ কাজ সাধিত হয় না। ডা. লুৎফর রহমানের ডাক্ত এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় । তিনি বলেন, “সাধনার কোনাে কোনাে ব্যাপারে যদি প্রথমবারে ব্যর্থ মনােরথ হও, তবে তড়িৎ যেওনা-বারেবারে আঘাত
কর, দুয়ার ভেঙে যাবে।” আবার Try again and again. অর্থাৎ একেই বলে অধ্যবসায়।

অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা : উদ্যম ব্যতিরেকে জগতে কোনাে কাজই সম্পন্ন হয় না। কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার বলেছেন,

“কেন পান্থ ক্ষান্ত হও
হেরি দীর্ঘ পথ 
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ?”

মানবজীবনে চলার পথে বাধাবিপত্তি আসবেই। এ বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। রাতের ঘন অন্ধকার কাটার পরে সােনালি প্রভাত দেখা দেওয়া এক বাস্তবতা। পুনঃপুন চেষ্টা করার ফলে মানুষের ভাগ্যাকাশে তেমনি উদিত হয় সাফল্যের শুকতারা। জীবনের প্রথম ব্যর্থতাকে মনে করতে হবে সাফল্যের সােপান।Failure is the pillar of success. জগতের কোনােকিছু অর্জন সাধনা ব্যতিরেকে সম্ভব নয় । চলার পথে যে জিনিস যত মূল্যবান, যত দুষ্প্রাপ্য, যত রহস্যময়, যত আকাঙ্ক্ষিত তাকে লাভ করার জন্য চাই তত বেশি পরিশ্রম, ধৈর্য ও সাধনা। জগতে যেসব ব্যক্তি উন্নতি করে সুনাম অর্জন করেছেন তারা সবাই অধ্যবসায়ী ছিলেন। বড় বড় শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক,সেনানায়ক, ধর্ম প্রবর্তক সবাই অধ্যবসায়ী ছিলেন। তারা বারবার ব্যর্থ হয়েও নিরলস পরিশ্রম করে অসীম ধৈর্য সহকারে নিজ নিজ আদর্শের পথে অগ্রসর হয়েছেন।

মানব সভ্যতায় অধ্যবসায় : আজকের সভ্য জগৎ আমাদের পূর্বপুরুষদের অধ্যবসায়েরই ফল। এ পৃথিবী একদিন ছিল মানুষের বাসের অনুপযােগী। মানুষ ছিল বনচর জন্তুর মতাে। তখন তাদের ভাষা, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, নির্মাণ কৌশল ইত্যাদি কোনােকিছুই ছিল না।গুহাবাসী মানব অনন্ত সাধনা ও অধ্যবসায়ের গুণে আজ সভ্যতার চরম শিখরে আরােহণ করেছে। যুগ যুগ ধরে মনীষীদের সাধনালব্ধ।জ্ঞানের সমন্বয়ে আজ প্রকৃতি এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়।



ছাত্রজীবন ও অধ্যবসায় : Students are the future of the country and the nation. ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। ছাত্রজীবনই উন্নত ভবিষ্যতের সােপান। কিন্ত ছাত্রজীবনে যে পরিশ্রম করে না সে কখনাে ভবিষ্যতে উন্নতি কামনা করতে পারে না। ছাত্রজীবন বীজ বপনের মৌসুম। ছাত্রজীবন অধ্যবসায়ের জীবন। অধ্যবসায়ী ছাত্র অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও জীবনে সে উন্নতি করতে পারে। হাদিসে বর্ণিত
আছে-“মানজাদ্দা ফাওয়াজাদা” অর্থাৎ যে চেষ্টা করে সেই পায়। অধ্যবসায়ী ছাত্ররাই জীবনের গৌরবময় আসনে অধিষ্ঠিত হয়।

অধ্যাবসায় ও প্রতিভা : প্রবাদ আছে—Rome was not built in a day. সুতরাং অবিশ্রান্ত শ্রম করবার প্রবৃত্তিকেই প্রতিভা বলে। আবার কেউ কেউ বলেন সহিষ্ণুতাই প্রতিভা। বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেছেন-
“লােকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ব্যতীত কিছুই বুঝি না। প্রকৃতপক্ষে প্রতিভা আকরের মধ্যথিত মণির মতাে।

অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ : স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস অধ্যবসায়ের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তিনি অগণিত ইংরেজ সৈন্যের সাথে যুদ্ধে বারবার পরাজিত হয়েও ইংরেজ বাহিনীকে পরাজিত করার বাসনা পরিত্যাগ করেননি।
তিনি মাকড়সা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হলেন এবং স্কটল্যান্ডের ওপর অপ্রতি রােধ্য আধিপত্য বিস্তার করলেন। পৃথিবীতে বহু ব্যর্থতা, বহু পরাভব, বহু হতাশাকে শেষপর্যন্ত অতিক্রম করা স হয়েছে অধ্যবসায়ের কল্যাণে। ফরাসি সমাট নেপােলিয়ন বােনাপার্ট দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে সামান্য অবস্থা থেকে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের গুণে ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতা হয়েছিলেন। তিনি বলেন—Impossible is a word only foundi n the dictionary of the fools-“বােকাদের অভিধানেই শুধু অসম্ভব শব্দটি দেখা যায়। আমেরিকা আবিষ্কারক কলম্বাস, বিজ্ঞানী নিউটন, মনীষী কালহিল, ডালটন এরা সবাই অধ্যবসায়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

অধ্যবসায়ের মূল্য : আমাদের জীবনে অধ্যবসায়ের মূল্য অপরিসীম। ভারতীয় দর্শনমতে, যদিও আমরা দুঃখবাদী এবং দুঃখে আমাদের জীবনগড়া তথাপি আমাদের মধ্যে অনেকেই দুঃখ-দৈন্যের সাথে পাঞ্জা লড়ে । মানুষ অধ্যবসায়ী না হলে বিশ্বের এত উন্নতি আদৌ সম্ভব।

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অত্যধিক। সব মানুষের শক্তি সমান নয়। কিন্তু সবাইকে উন্নত জীবনের সন্ধানে যেতে হয়। সেখানে যদি অধ্যবসায়ের যথার্থ প্রয়ােগ করা যায় তবে শক্তির স্বল্পতা সাফল্যের পথে কোনাে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।

উপসংহার: কথায় আছে—A man's best friend is his ten fingers. তাইতাে অধ্যবসায়ই বিশ্বের সব তােরণ খুলে দেয়। সেজন্য অধ্যবসায়কে আমাদের সবার আঁকড়ে ধরা উচিত। কেননা অধ্যবসায়ের গুণেই ছেড়া ন্যাকড়ার পৃথিবী আজ সােনার পুতুল।
অধ্যবসায়ের জন্য চাই আত্মবিশ্বাস ও সুদৃঢ় মনােবল । পরিশেষে, আমাদের মন্ত্র হওয়া উচিত-

“ভেঙ্গে যাবে বাঁধন
 ভাঙবে না তবু প্রত্যয় সাধন
ভাঙবে না কভু সৃজন মনন
ধিক! শত প্রলয় মহা প্রলয়
দীপ্ত বাহুতে উড়াও আজি
আত্মর মহাবিজয়।”
Next Post Previous Post
5 Comments
  • MT Habibur Rahman
    MT Habibur Rahman ৪ মার্চ, ২০২০ এ ১:২০ AM

    nice compossition

    • gganbitan.com
      gganbitan.com ৬ মার্চ, ২০২০ এ ১০:০৫ PM

      ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

  • Unknown
    Unknown ১৯ এপ্রিল, ২০২০ এ ৯:৩৪ PM

    amar posondo hoise

    • তিমন দে
      তিমন দে ২১ এপ্রিল, ২০২০ এ ৮:০২ AM

      ধন্যবাদ

  • grammarwritingpart
    grammarwritingpart ৬ মে, ২০২০ এ ৪:১৪ PM

    Thanks

Add Comment
comment url