অনলাইনে ব্লগ বা ইউটিউব থেকে কি সত্যি আয় করা যায় বা কত টাকা আয় করা সম্ভব

অনলাইনে টাকা আয় বা অনলাইনে ইনকাম বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় বিষয়। যাদের অনলাইন সম্পর্কে নুন্যতম ধারণা রয়েছে তারা অনেকেই মনে করেন অনলাইনে টাকার ছড়া-ছড়ি। অনলাইনে কাজ করে ঘরে বসে থেকেই লাখ লাখ টাকা ইনকাম করা সম্ভব। আমাদের এই ধারণা আসলে কি সত্যি বা কতটুকু সত্যি আমরা কি তা জানি?
আমরা সবাই ইউটিউব গুগলে সার্চ করলে দেখতে তাই এক ঘন্টা কাজ করে আয় করুন ১০ হাজার টাকা ২০ হাজার টাকা ১ লাখ টাকা। তাও আবার কোনরূপ পরিশ্রম ছাড়াই এবং কোন দক্ষতারও প্রয়োজন নেই। আচ্ছা ভাবুন তো টাকা কি গাছে ধরে? আউটসোর্সিং করে কিভাবে টাকা আয় করা যায় তার ভূল দিক নির্দেশনার জন্য আমরা বার বার ব্যার্থ হচ্ছি।
ইউটিউবে আয়ের পরিমাণ
আসুন অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে কিছু সত্য কথা জেনে নেই। এবং অনলাইন থেকে আপনি কি পরিমাণ অর্থ কতটুকু পরিশ্রম করে আয় করতে পারেন বা এসকল চটকদার শিরোনাম এর সত্যতা কতটুকু জেনে নেই। তবে আগেই বলে রাখি পোস্টে কিছুটা হতাশা ব্যঞ্জক হতে পারে। যারা অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করার জন্য মনস্থির করেছেন তাদের জন্য অনেক উপকারী হবে বলে মনে করি।

আসলে আপনাদের মত আমিও একসময় মনে করতাম অনলাইনে কাজ করা মানে প্রচুর পরিমাণে টাকা! হ্যাঁ আসলেই তাই। এটি কোন মিথ্যা কথা নয়। তবে আপনি কি এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছেন? এটাই হলো মূল বিষয়!  যদি আপনি এখানে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে চান তাহলে আপনাকে দক্ষতা অর্জন ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।  কখনোই বসে বসে আয় করা সম্ভব নয় অনলাইনে! এর মূল কারণ কেউ আপনাকে দেখে টাকা দিবে না। অবশ্যই আপনার কাজের উপর আপনার পারিশ্রমিক নির্ভর করবে।

আচ্ছা আমাদের পরিবারের অনেকেই কোন না কোন পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন। আপনি কি তাদের বেতন সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেন? হ্যাঁ তাদের বেতন সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলেও মোটামুটি ধারণা থেকে বলতে পারি। একজন শ্রমিকের মাসিক বেতন 12 থেকে 15 হাজার টাকার মধ্যে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বেতন 8000 থেকে 10000 টাকার ভিতরে থাকে। এবং তার অন্যান্য সকল খরচপত্র নিজেকেই বহন করতে হয়। কারণ এই বেতনের বাইরে অন্য কোন খরচ দেওয়া হয় না।

মনে করুন তার কর্মস্থল তার বাসা থেকে অনেকটা দূরে। এবং তাকে প্রতিদিন গাড়িতে করে সেখানে যেতে হয়। পায়ে হেঁটে ঠিক সময় কাজ করাটা তার পক্ষে অসম্ভব। তার এই গাড়ি ভাড়া মনে করি দশ টাকা তাহলে তার কাজে আসতে এবং বাসায় ফিরতে দৈনিক খরচ হচ্ছে ২০ টাকা। এবং তাহলে তার মাসিক খরচ শুধুমাত্র কর্মস্থলে পৌঁছতে এবং বাসায় ফিরতে ৬০০ টাকা।যেখানে তার বেতন হলো ১০০০০ টাকা।

এবং তাকে ন্যূনতম ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পরিশ্রম করতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এই সময়টা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।কর্মবিরতি সেতো নাই বললেই চলে।তাহলে একজন সাধারণ শ্রমিকদের এই ১০ হাজার টাকা আয় করতে দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা করে ৩০ টি দিন খাটতে হয়। তাহলেই সে পুরো বেতন পাবে। যদি কোনো কারণে তার একটি দিন কাজে যাওয়া বন্ধ হয় তাহলে তার বেতন থেকে ওইদিনের টাকাটা কেটে নেওয়া হবে।


যাই হোক একজন শ্রমিকের কষ্ট এবং আয়ের কথা শুনলাম।এবার আসি একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কাছে। আমাদের বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একজন সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার ভিতরেই বেশিভাগ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। যদি একজন চাকরিজীবীর বেতন ৫০ হাজার টাকা হয় তাহলে অন্য মানুষ বলাবলি করে ওরে-বাব্বা ওর বেতন ৫০ হাজার টাকা। মূলত এই একটি কথার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকার ভ্যালু সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। এই হলো আমাদের বাস্তবিক জীবনের আয় তবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকে এর থেকে বেশি আয় করে থাকেন। যেগুলো হাজারে বললে ভুল হবে লাখে এক-দুজন।

এবার আসি ভার্চুয়াল জগতের কথা এখানে কাজ মানে ঘরে বসে মাথার উপর ফ্যান চলবে। আপনি কফি খাবেন আর ল্যাপটপ বা কম্পিউটার টিপবেন। সেই সাথে সাথে আপনার হাজার হাজার ডলার ইনকাম হতে থাকবে। এমনটাই চিন্তা করি আমরা অনেকেই। অনেকেই বাস্তব জীবনকে আর ভার্চুয়াল জীবনকে আলাদা করে ফেলেন। তারা এটাই ভুলে যায় যে অনলাইন এবং অফলাইন বা আমাদের বাস্তব জীবন একে অপরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। তবে একে অপরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত বললে ভুল হবে। বরং বলা চলে অনলাইন জগত আমাদের বাস্তবিক জীবনের ক্ষুদ্রতম একটি অংশমাত্র। অনলাইন জগত সম্পুর্ন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ওপর ভিত্তি করেই চলছে। বাস্তব জীবনে দুঃসময় দেখা দিলে অনলাইন জীবনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া অবশ্যই পড়বে। এটি হবে বাস্তব জীবন থেকেও দুর্বিষহ। যার  উদাহরণ আমরা বর্তমান করোনা মহামারীর সময় টের পাচ্ছি।

তবে আমরা অনেকেই ইউটিউবে বা ওয়েবসাইটে  দেখে থাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাসে আয় করুন ১ লক্ষ টাকা। চিন্তা করুন সে যদি আপনাকে মাসে এক লাখ টাকা আয় করার পথ দেখিয়ে দিতে পারে তাহলে তাঁর মাসিক আয় কত টাকা। কেউ যদি আপনাকে মাসে এক লাখ টাকা আয় করার পথ দেখিয়ে দেয় তাহলে ন্যূনতম সে মাসে ১০ লাখ টাকা আয় করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

কিন্তু এই যে মাসে আয় করুন ১ লক্ষ টাকা আয়ের কথা যে লোকটি বলল তার সাথে কি আপনি ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত? আপনি কি পারবেন এদের একজনকে খুঁজে বের করতে।যে আপনাকে ইউটিউবে বলেছিল, সামান্য কাজ করে মাসে এক লাখ টাকা আয় করুন কোন রকম দক্ষতা ছাড়া। আপনি যদি এই রহস্যের জট খুলতে চান তাহলে এই ভিডিওটি যে তৈরি করেছে তার সাথে দেখা করুন এবং তার লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানুন। তাহলে তার ভিডিও সম্পর্কে সম্পূর্ণ বাস্তব ধারণা অর্জন করতে পারবেন। এবং অনলাইনে আপনি মাসে কত টাকা আয় করতে পারবেন এ সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন। কারণ এরকম টাকা আয় করা মানুষের লাইফ স্টাইল দেখলেই বোঝা যায় সে কতটা ধনী।

মূলত এটি একটি প্রলোভন মাত্র। আপনাকে দিয়ে তার ভিডিওটি দেখানোর জন্যই তারা এটি করে। এর ফলে আপনি তার ভিডিওটি দেখবেন এবং এই ভিডিও দেখানোর মাধ্যমে আপনি একটি বিজ্ঞাপন দেখে থাকবেন তার ভিডিওর সাথে। এই বিজ্ঞাপনটি থেকে সে মূলত আয় করছে। এবং এই বিজ্ঞাপনটি থেকে সে সর্বোচ্চ 1,2,5,10,20 সেন্ট পর্যন্ত আয় করতে পারে। তবে এ আয় নির্ধারিত নয় যে আপনি ভিডিও দেখলেই তার আয় হবে। কারন গুগল এডসেন্স কখনোই শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখার জন্য অর্থ দেয় না। যদি আপনি তাদের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেন তাহলে কিছু পরিমাণ অর্থ পাবে সেই ভিডিও নির্মাতা। এবার চিন্তা করুন আপনি কতগুলো ভিডিও দেখে এর ভিতর একটি ক্লিক করেন। বা কতগুলো পোস্ট পড়ে তার ভিতরে তাদের এড এ একটি ক্লিক করেন। তাহলে এবার অবাক হয়ে গেলেন তাইনা যে আপনাকে লাখ টাকা আয় এর পথ দেখিয়ে দিল তার এই দশা!
ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়
তাহলে ব্লগিং এবং ইউটিউবার দের আয় এত কম তা ভাবলেও ভূল হবে কারন কিছু কিছু ব্লগার বা ইউটিউবার রয়েছে যারা মাসে হাজার ডলারের বেশি ইনকাম করেন। তবে সেটা একদিকে তাদের পরিশ্রমের এবং সঠিক দিক নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার ফল। আপনি যদি সঠিক দিক নির্দেশনা ও এবং কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন তাহলে আপনিও অবশ্যই ভালো পরিমান আয় করতে পারবেন। তাই হতাশ না হয়ে আমাদের উচিত প্রথমে টাকার কথা না চিন্তা করে সঠিক দিক নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা।তাহলে আমাদের সফলতা কেউ আটকাতে পারবে না।

একজন ব্লগার বা ইউটিবারের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে এবং আয় করতে হলে যেসকল বিষয় জানা দরকার সেগুলো একটু জেনে নেওয়া যাকঃ

কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি- কথায় বলে "কন্টেন্ট ইজ কিং" এ কথা বলার প্রধান উদ্দেশ্য হলো সফলতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই কোয়ালিটি সম্পন্ন কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। যা মানুষের পছন্দ হবে এবং তাদের জন্য দরকারী হবে।আপনি যদি মনে করেন যত বেশি কন্টেন্ট তৈরি করবো ততই লাভবান হবো তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন।  কারন আপনার কন্টেন্ট যদি ভালো এবং গ্রহনযোগ্যতা সম্পন্ন না হয় তাহলে যতই মার্কেটিং করুন না কেন লাভবান হতে পারবেন না। এর জন্য আয়ের আগে কোয়ালিটির দিক নজর দিন। এক দিনে ১০ টি সস্তা কন্টেন্ট তৈরি না করে ১ মাসে একটা কোয়ালিটি কন্টেন্ট পাবলিশ করুন দেখবেন অবশ্যই সুফল পাবেন। এবং আপনার কন্টেন্টের মার্কেটিং আপনার দর্শকই করবে।

কন্টেন্ট মার্কেটি- আপনি যতই ভালো কন্টেন্ট তৈরি করুন না কেন সেটা যদি সঠিক ভাবে গ্রাহকদের নিকট উপস্থাপন করা না যায় তাহলে সফলতা পাওয়া অসম্ভব বলা চলে। তাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করার পাশাপাশি সঠিক উপায় মার্কেটি টাও করতে হবে। একটি পন্য যেমন সঠিক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের নিকট পৌছে দিতে পারে এবং পক্ষান্তরে আপনার আয়ের দুয়ারও উন্মেচন করতে সক্ষম হবে এটি।

উদাহারন স্বরুপ একটি কোয়ালিটি কন্টেন্ট যদি ১০০ জনের কাছে পৌছে দেওয়া তবে তা ১০০০ মানুষের কাছে পৌছাতে সময় নিবে না। কিন্তু কন্টেন্ট যদি কোয়ালিটি সম্পন্ন না হয় তবে শুধু প্রচার হবে কিন্তু প্রসার হবে না। তাই যদি কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন তাহলে আয় অবশ্যই সম্ভব। এবং তা এতদিন গল্পে যেমন টা শুনেছেন সেইরকমই।

এবার আসি একটা ভাল পরিমান আয় পেতে হলে কতদিন সময় লাগতে পারে- একটি ব্লগ বা ইউটিউব হতে আশানুরূপ ফল পেতে হলে অবশ্যই ধৈর্য ধারন করে কাজ করতে হবে। এবং কন্টেন্ট পাবলিশ এর পাশাপাশি মার্কেটিং ও করতে হবে।এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সহ বিভিন্ন সৎ পন্থা অবলম্বন করে ভিজিটর বৃদ্ধি করতে হবে। এর পরে আসি আয়ের প্রধান উপায় এডসেন্স নিয়ে। এডসেন্স এপ্রুভ হলেই যে আপনার আয় শুরু হবে তা কিন্তু নয়। এ জন্য বিভিন্ন কাজ করতে হবে এবং ট্রাফিক জেনারেট করতে হবে। এতে করে এড ক্লিকের পরিমান বাড়বে এবং আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

সর্বোপরি আমি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই।অনলাইনে আয় করতে চাইলে আপনি আয় অবশ্যই করতে পারবেন। কিন্তু তার জন্য সময়, শ্রম, মেধা এই তিনটি জিনিস থাকতে হবে। তাহলে আপনার সফলতা কেউ আটকাতে পারবে না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url