ইথিক্যাল হ্যাকিং কি এর গুরুত্ব এবং কেন এথিক্যাল হ্যাকিংয়ে ক্যারিয়ার গড়বেন!

হ্যাকিং শব্দটির নাম শুনলেই আমাদের মনের ভেতরে একটি আতংকের সৃষ্টি হয়। হ্যাকিং শব্দটি শুনলেই চিন্তা করি নিশ্চয়ই কোন সমস্যার মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। আমরা পূর্বে জেনেছে হ্যাকার প্রধানত দুই প্রকার ১: হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার (white hat hacker)  এবং ২: ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার (Black hat hacker)। আমরা জানি হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার হচ্ছে মূলত কারো ক্ষতি সাধনের জন্য হ্যাকিং করে না। এরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ক্রমে সিস্টেমের ত্রুটি (BUG) খুঁজে বের করে এবং তা ঠিক করে দেয়ার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে থাকে।

অপরদিকে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার হচ্ছে কোন সিস্টেমের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সিস্টেমে ত্রুটি বের করে অনধিকারে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিসাধন করে থাকে। তবে আমাদের মাঝে নতুন নাম হচ্ছে ইথিক্যাল হ্যাকিং (ethical hacking) ! তাহলে এই ইথিক্যাল হ্যাকিং আবার কি জিনিস?

আসুন জেনে নেই ইথিক্যাল হ্যাকিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা! এবং ক্যারিয়ার হিসেবে ইথিক্যাল কেন নিবেন ও কিভাবে শিখবেন এথিক্যাল হ্যাকিং! এবং কিভাবে সার্টিফাইড ইথিক্যাল হ্যাকার (Certified Ethical Hacker) হবেন। এবং কেমন হতে পারে একজন ইথিক্যাল হ্যাকারের বেতন!

প্রথমেই বলে রাখি আমাদের ওয়েবসাইটে মূলত টার্গেট করা হয় সাধারণ পাঠকদের যারা সহজ এবং সাধারন ভাবে বুঝতে চান। এ কারনে আমরা বিষয় গুলো খুব সহজ ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি পাঠকদের কাছে। যাতে তারা সহজ ভাবেই বুঝতে পারেন!

"এথিক্যাল হ্যাকিং" শব্দটি আমাদের কাছে বেশ নতুন একটি শব্দ! এবং মূলত আমরা এই শব্দটির সাথে পরিচিত হয়েছি বিভিন্ন আইটি কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখে! তারা "ইথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ুন" "ইথিক্যাল হ্যাকিং বাংলা কোর্স" "ইথিক্যাল হ্যাকিং এর চাহিদা" ইত্যাদি সম্পর্কে তারা বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন! এবং তারা বলে থাকেন, একজন ইথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে চাকরি করতে পারবেন! কিন্তু হ্যাকার হিসেবে চাকরি বেশ আজব লাগে আমাদের কাছে!

ইথিক্যাল হ্যাকিং কি? "ইথিক্যাল" (ethical) শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে "নৈতিক" বা "বৈধ"।  অর্থাৎ ইথিক্যাল হ্যাকিং এর বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে "নৈতিক বা বৈধ হ্যাকার" তাহলে সাধারণভাবে বুঝতে গেলে বলা চলে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার (white hat hacker) -ই হচ্ছে আসলে ইথিক্যাল বা এথিক্যাল হ্যাকার!

আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখি ফেসবুক আইডি হ্যাক করার apps, ওয়াইফাই হ্যাক, ফেসবুক হ্যাকিং সফটওয়্যার android, ওয়াইফাই হ্যাক করার সফটওয়্যার, কিভাবে ফেসবুক পাসওয়ার্ড হ্যাক করা যায়, বিকাশ একাউন্ট হ্যাকিং, অন্যের মোবাইল হ্যাক করার উপায়, মোবাইল দিয়ে ফেসবুক আইডি হ্যাক, হ্যাকিং শিখার বই, হ্যাকিং সফটওয়্যার ইত্যাদি বিভিন্ন নামে বিভিন্ন নামে চটকদার আর্টিকেল পাই যেখানে মূলত হ্যাকিং শেখানোর চেষ্টা করা হয় বিভিন্ন উপায়ে।

এখান থেকে সত্যিকারে হ্যাকিং শেখা হোক বা না হোক এগুলো শেখার মূল বিষয় মানুষের ক্ষতি সাধন করা। এছাড়াও বিভিন্ন সময় আমরা খবর দেখতে পাই ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ। বা সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে স্পর্শকাতর তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাক মেইলের মাধ্যমে অর্থ আদায় ইত্যাদি। এগুলো হচ্ছে মূলত ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের কাছ।

তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে মানুষের ক্ষতি সাধন করে থাকে। এবং সমাজ এবং দেশের কাছে তারা অপরাধী তাই তারা সব সময় আত্মগোপন করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি একজন হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার বা ইথিক্যাল হ্যাকার হন তাহলে আপনি সগৌরবে বলতে পারবেন আপনি একজন ইথিক্যাল হ্যাকার। আপনার জন্য থাকবে না কোনো আইনি জটিলতা বা সামাজিক নিন্দা।

একজন ইথিক্যাল হ্যাকার কিভাবে কাজ করে? একজন এথিক্যাল হ্যাকার এর কার্যপ্রণালী একজন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন ইথিক্যাল হ্যাকার বা হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার মূলত কাজ করে কোন সিস্টেম এর ত্রুটি খুঁজে বের করার জন্য। আমরা জানি কোন সিস্টেম বা নেটওয়ার্কের ভিতরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ এবং তার কন্ট্রোল নেওয়া আইনত অপরাধ। এ কারণে একজন ইথিক্যাল হ্যাকার সিস্টেমের কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতি ক্রমে সিস্টেমটির ত্রুটি খুঁজে বের করে। আমরা জানি কোন কিছুরই একশত ভাগ ত্রুটি মুক্ত নয়। একটি ত্রুটি ঠিক করলেও নতুন আরও অনেক ত্রুটি আমাদের অগোচরে থেকে যাবে।

[ডার্ক ওয়েব এবং ডিপওয়ের সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারন সম্পর্কে জানুন]

এরপরেও সুরক্ষা নিশ্চিত এর জন্য অবশ্যই আমাদের কোন সিস্টেমের ত্রুটি খুঁজে বের করা এবং তা ঠিক করা অবশ্য কর্তব্য। এবং এই কাজটি করে থাকে একজন ইথিক্যাল হ্যাকার বা হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার।

তার তাদের হ্যাকিং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে একটি সিস্টেম এর ত্রুটি খুঁজে বের করে। এবং সিস্টেমটির এক্সেস নেয় কিন্তু সে সিস্টেমটির ক্ষতিসাধন এর পরিবর্তে সিস্টেম ত্রুটি গুলো কতৃপক্ষকে অবহিত করে এবং তা ঠিক করার জন্য কাজ করে।

যেখানে একজন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার একটি সিস্টেম এর ত্রুটি খুঁজে বের করে তার হ্যাকিং দক্ষতা মাধ্যমে সিস্টেমের এক্সেস বা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তার ক্ষতি সাধন করে এবং তথ্য হাতিয়ে নেয়। পক্ষান্তরে একজন ইথিক্যাল হ্যাকার সিস্টেমটির এক্সেস বা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে কর্তৃপক্ষকে অবগত করে এবং তা ঠিক করার জন্য কাজ করে। যাতে সিস্টেমটির ব্যবহারকারীগণ কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হয় এটাই হচ্ছে ব্লাক হ্যাট হ্যাকার এবং ইথিক্যার হ্যাকারের মধ্যে পার্থক্য। তাহলে এই তথ্য গুলো হতে আপনি একজন ইথিক্যাল হ্যাকার এবং অন্যান্য হ্যাকার এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছেন।

কেন শিখবেন এথিক্যাল হ্যাকিং: এথিক্যাল হ্যাকার কোনটি আমরা জেনেছি৷ এবার আসুন জেনে নেই কেন আমরা ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখব। আমরা আপনাকে পরামর্শ দিব ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখুন! এর প্রধান কারণ হলো বর্তমান সময়ে ইথিক্যাল হ্যাকার এর চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে আইটি সেক্টরের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে সেই সাথে অনলাইন ভিত্তিক সেবার ও প্রসার ঘটেছে। অনলাইন ভিত্তিক ব্যাংকিং সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি বিগত কয়েক বছরে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইসাথে হ্যাকিং এর মাত্রা ও প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ইথিক্যাল হ্যাকার এর চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শুধুমাত্র চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই কে আমরা আপনাকে ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখার পরামর্শ দিচ্ছি? অবশ্যই না!

[ফিশিং কি এবং আপনিও হতে পারেন ফিশিং এর শিকার]

বর্তমানে যেমন ইথিক্যাল হ্যাকার এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি একজন ইথিক্যাল হ্যাকার এর বেতন কিন্তু কম নয়। আপনি এ সেক্টরে কাজ করার মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। একজন ইথিক্যাল হ্যাকারের বেতন ৬০ লক্ষ টাকার অধিক।

সেই সাথে একজন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার যেমন সমাজের চোখে অপরাধী তেমনি একজন ইথিক্যাল হ্যাকার হচ্ছে সম্মান জনক পদমর্যাদা প্রাপ্তির দাবিদার। এবং এই সেক্টরে আপনার পরিচয় গোপনেরও কোন কারণ নেই। কারণ এটি সরকার এবং সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত এবং প্রশংসনীয় একটি কাজ।

আপনি একজন দক্ষ এথিকাল হ্যাকার হলে আপনার কাজের অভাব হবেনা। আপনার কর্মক্ষেত্র হবে বিশাল। আপনি চাইলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে যেখানে তথ্যের নিরাপত্তা দরকার সেখানে কাজ করতে পারবেন অথবা বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠান বা সফটওয়্যার কোম্পানি তো আপনি কাজের সুযোগ পাবেন। এছাড়াও চাইলে আপনি বিভিন্ন সফটওয়্যার এর বাগ (Bug) বা সিস্টেম জনিত ত্রুটি খোঁজা এবং তা ঠিক করার মাধ্যমে ঘরে বসে ইথিক্যাল হ্যাকিং এর মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবেন।

ইথিক্যাল হ্যাকিং এবং হ্যাকিং এর মধ্যে পার্থক্য: আমাদের দৃষ্টিকোণ হতে ইথিক্যাল হ্যাকিং এবং হ্যাকিং এর মধ্যে বিরাট পার্থক্য থাকলেও। টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে হ্যাকিং এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ দুই ক্ষেত্রেই কাজ একই। শুধুমাত্র এথিক্যাল হ্যাকিং এবং হ্যাকিং কিংবা হোয়াইট হ্যাকার এবং ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে কাজের দিক থেকে।

যেখানে একজন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার কাজ করেন নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য, অন্যায় পথে এবং অন্যের ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিল করে বা অর্থ উপার্জন করে।

পক্ষান্তরে একজন ইথিক্যাল হ্যাকার বা হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার মূলত অপরের সহযোগিতা এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে। এবং তারা সবসময় কাজ করে আপনি যেন হ্যাকিংয়ের শিকার না হয় বা আপনার কোন গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যক্তিগত নথি বেহাত হয়ে না যায় সেজন্য। এবং তারা সেবামূলক কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে।

কিভাবে শিখবেন এথিক্যাল হ্যাকিং বা ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখার উপায়: আপনি বিভিন্ন উপায়ে ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখতে পারেন এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ইথিক্যাল হাকিং কোর্স এর মাধ্যমে শেখা। চাইলেই আপনি অনলাইনে হাজারো ইথিক্যাল হ্যাকিং বাংলা কোর্স (ethical hacking Bangla course) পেয়ে যাবেন। অথবা আপনি সরাসরি কোনো আইটি ট্রেনিং সেন্টার হতে ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখতে পারেন। তবে এটি শেখার জন্য আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণে ধৈর্যশীল এবং পরিশ্রমী হতে হবে। কারণ এটি কোন ক্ষুদ্র সেক্টর নয় যে আপনি 2-1 দিনেই কাজ শিখে যেতে পারবেন।

এছাড়াও সকল প্রকার হ্যাকিংয়ে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এবং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো আয়ত্তে আনতে হবে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে আপনার একজন নৈতিক হ্যাকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারবেন।

সকল প্রকার কোর্স ও সার্টিফিকেট অর্জন এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং এ সম্পূর্ণ পারদর্শিতা অর্জন করার পরে আপনাকে যোগ দিতে হবে "ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইলেক্ট্রনিক কমার্স কন্সাল্টান্ট" প্রোগ্রামে। তবেই আপনি একজন ইথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেন।

তাহলে আসুন এবার জানি একজন ইথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আপনাকে কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে! প্রথমত একজন হ্যাকার বা ইথিক্যাল হ্যাকার হতে হলে আপনাকে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম (operating system) সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞান থাকতে হবে। বিশেষ করে উইন্ডোজ (Windows), লিনাক্স (Linux)  ইত্যাদি। এছাড়াও  ইউনিক্স (Unix)/লিনাক্সের (Linux) সম্পর্কে পারদর্শিতা থাকতে বাঞ্ছনীয়। এবং লিনাক্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রো এবং কম্যান্ড সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি সি (C),  জাভা (JAVA) ,পার্ল ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানতে হবে এবং ডাটাবেজ যেমন; এসকিউএল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url