বিশ্বের ভয়ংকর এবং মারাত্মক ৫টি জন্তু জানোয়ার

এই রহস্যময় পৃথিবীতে রয়েছে হাজারো রকমের জীবজন্তু। কতগুলো দেখতে সুন্দর এবং স্বভাবের দিক থেকেও শান্ত স্বভাবের কতগুলো আছে ভয়ংকর আবার কত গুলো রয়েছে দেখতে সুন্দর হলেও ভয়ংকর। মনে হয় এই সুন্দর কিন্তু বিপদ জনক জিনিস গুলোর জন্যই "ভয়ংকর সুন্দর" নামক শব্দটার উৎপত্তি হয়েছে।
আজ আমরা এমন কয়েকটি জঙ্গলের সবচেয়ে ভয়ংকর জন্তু-জানোয়ার সম্পর্কে জানবো। যা আপনার জানার আগ্রহ - কে আরো বাড়িয়ে দিবে! 


১: সবুজ অ্যানাকোন্ডা (Green Anaconda) 

Green Anaconda
গ্রীণ অ্যানাকন্ডা বা সবুজ অ্যানাকন্ডা সাপ বিষহীণ।তবে বিষহীন বলে কখনোই দূর্বল মনে করবেন না! এটি সাপের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারের প্রজাতি । দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে এদের পাওয়া যায় বিশেষ করে অ্যামাজন জঙ্গলে। এই প্রজাতির সাপ সবচেয়ে লম্বা ও মোটা হয়। এগুলো আকারে প্রায় ২৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তবে ২৮ ফুট অ্যানাকন্ডাও রয়েছে বলে শোনা গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক সবুজ অ্যানাকন্ডা সাপের ওজন সাধারণত ১০০ কেজির বেশি হয়। স্ত্রী সাপ পুরুষ সাপের চেয়ে আকারে বড় এবং ওজনে ভারি হয়। এটি প্রথমে শিকারকে কামড়ে পেচিয়ে ধরে হাড়গোড় ভেঙ্গে ফেলে। যারা ফলে শিকারটি নড়াচড়া করতে পারে না এবং অতিরিক্ত চাপের ফলে শিকারের দম বন্ধ এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায়।এর পরে এটি গোটা শিকারকে আস্ত গিলে খেয়ে নেয়! এটির শিকারের তালিকাতে রয়েছে বড় আকারের মাছ সহ হরিণ, কেইমান, ক্যাপিবারা, মানুষ এমনকি কুমির ও জাগুয়ারও বাদ যায় না!

২: বিষ ডার্ট ব্যাঙ (Poison Dart Frog)
Poison Dart Frog
এই প্রজাতি পৃথিবীর সুন্দরতম ব্যাঙের একটি। দেখতে অসম্ভব সুন্দর হলেও এটিকে অনেক ভয়ংকর বা বিষধর ব্যাঙের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ব্যাঙগুলো আকৃতিতে বেশ ছোট হয়। এটিতে এত পরিমাণ বিষ রয়েছে যে এটি এক কামড়ে ১০ জন মানুষকে একসাথে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। এই ব্যাঙ শিকারের কাজে তার বিষের ব্যবহার খুব ভালো করেই করতে জানে। প্রথমে শিকারকে জিহ্বা দিয়ে আটকিয়ে ধরে এরপর ধীরে ধীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয় শিকারের গায়ে। অ্যামাজন জঙ্গলের আদিবাসীরা এই ব্যাঙের বিষ সংগ্রহ করে শিকারের কাজে লাগায়৷ এর জন্য তারা প্রথমে ব্যাঙের বিষ সংগ্রহ করে তীরের মাথায় বিশেষ প্রক্রিয়ায় লাগায়। এরপর শিকারকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করে এবং তীর যদি সঠিক ভাবে লাগে তাহলে প্রাণীটি বিষের প্রভাবে মারা যায়। এই ব্যাঙের বিষ চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।   

৩: হার্পি ঈগল (Harpy Eagle)
Harpy Eagle
হার্পি ঈগলের কথা সর্বপ্রথম জানা যায় ১৭৫৮ সালে সুইডেনের জীব বিজ্ঞানী কার্ল লিনেয়াসের লেখা বই ‘সিস্টেমা নেচার’-এর মাধ্যমে। হার্পি ঈগল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রজাতির ঈগল। আকাশের সবচেয়ে বড়, শক্তিশালী এবং হিংস্র প্রজাতির পাখির মধ্যে হার্পি ঈগল অন্যতম। এই প্রজাতির ঈগল অ্যামাজন জঙ্গলে পাওয়া যায়। স্ত্রী হার্পি গুলো পুরুষ হার্পিদের তুলনায় বড় হয়। স্ত্রী হার্পিগুলোর ওজন সর্বোচ্চ ১২ কেজি পর্যন্ত হয়। আর পুরুষ হার্পিগুলোর ওজন হয় সাধারণত ৫ কেজির মতো। এই ঈগলের দেহ প্রায় ৪০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এগুলোর পা একটি মানবশিশুর হাতের সমান মোটা হয়। এর পায়ের নখ অনেক লম্বা যার সাহায্যে এটি হরিণ, বড় আকারের মাছ এবং সাপ এমনকি চিতাবাঘ পর্যন্ত শিকার করে খেয়ে থাকে।
এগুলো সাত-আট কেজি ওজনের প্রাণী খুব সহজেই শিকার করে ফেলে। এর পাখা লম্বায় প্রায় সাড়ে সাত ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।


৪: জাগুয়ার (Jaguar)
Jaguar
পৃথিবীতে চারটি বাঘ জাতীয় প্রাণীর মধ্যে জাগুয়ার একটি। অন্য তিনটি হলো সিংহ, বাঘ ও চিতাবাঘ। জাগুয়ার চিতাবাঘের মতোই শরীরে ছাপওয়ালা। তবে এটি চিতাবাঘের অনেক বড় এবং শক্তিশালী।   লম্বায় প্রায় সাত ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি যেমন গাছে চড়তে দক্ষ তেমনি জলে সাতার কাটতেও। কোনো জায়গায়ই তেমন কোনো কিছু এর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এর প্রধান খাদ্য দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন স্তন্যপায়ী এবং সরীসৃপ। এটি মানুষ থেকে শুরু করে হরিণ, মাছ সবই খায়। এটি প্রায় ৮০ প্রজাতির প্রাণী শিকার করে। এমনকি কুমিরও এর খাবারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় না।  

৫: ব্ল্যাক ক্যামন (Black Caiman)
Black Caiman
অ্যামাজন জঙ্গলে পাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রজাতির কুমির হচ্ছে ব্ল্যাক ক্যামন।
এটি লম্বায় ১২ থেকে ১৩ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি মাছ,শূকর,হরিণ সহ আরো নানা খাবার খায়। এটিকে অনেক সময় অ্যামাজন নদীর রাজা বলা হয়। বর্তমানে এই প্রজাতির কুমিরের চামড়া দ্বারা বিভিন্ন ব্যাগ ও জ্যাকেট বানানো হয় যা বাজারে চড়া মূল্যে বিক্র‍য় করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url