রচনা: নদীতীরে সূর্যাস্ত অথবা, যখন সন্ধ্যা নামে

রচনাঃ নদীতীরে সূর্যাস্ত
অথবা, যখন সন্ধ্যা নামে

[সংকেত: ভূমিকা–পূর্বাচলে ধাই- অতলে রবি- ঘরে ফেরা- উপসংহার]
রচনাঃ নদীতীরে সূর্যাস্ত
ভূমিকা : এ বিশ্বের মহাবিস্ময় সূর্য। একে নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। এটি যেন বিজ্ঞানীদের খেলার পুতুল। তাৱশ্যি সরাসরি হাতে নয়, গবেষণায়। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘােরে, না পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘােরে এ নিয়ে বহু বাদানুবাদ করেছেন গবেষক তথা জ্যোতির্বিদ ও বিজ্ঞানীগণ।

আমরা সাধারণ চোখে দেখি পূর্ব দিকে একটি অগ্নি গােলক। এটি দৃষ্টিগােচর হয় রাতের অবসানাে প্রভাত বেলায়। সারাদিন নিরন্তন জ্বালাও-পােড়াও কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যাবেলা এটি আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে চলে যায়। তখন একে বলা হয় সূর্যাস্ত। সূর্যের এ লােকচক্ষুর অন্তরালে হারিয়ে যাওয়াকেই বলে সূর্যাস্ত। সে দৃশ্য সত্যিই মনােহর।

রচনাঃ শ্রমের মর্যাদা

পূর্বাচলে ধাই : আমার বড় কাকা ছিলেন দাদা-দাদির জ্যেষ্ঠ সন্তান। তিনি 'আসাম বেঙ্গল রেলওয়েতে চাকরি নিয়েছিলেন দেশ জিভাগোয়া পূর্বে। দাদির কাছে শুনেছি তার নিয়ােগ হয়েছিল আসামের লামডিঙ-এ। ১৯৪৮ সালের পর তিনি চট্টগ্রামে বদলি হল। তিনি সোই হাে হয়। চট্টলায় থিতু হলেন আর ওখান থেকে নড়লেন না। শুধু তাই নয়, তিনি দেশের বাড়িতেও এলেন না। আসামের চেরাপুঞ্জিতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়।

দেশ গ্রামের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে কাকা আসাম গেলেন সুখের সন্ধানে। বঙ্গত্যাগী আসাম প্রবাসী ছেলের অগস্ত্য যাত্রায় দাদির দুচোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝরত। অতিরিক্ত অশু বর্ষণের কারণে আমরা দাদির পটলচেরা চোখকে বলতাম চেরাপুঞ্জি। আমরা চোখের আড়াল হলে মায়ের কষ্ট হয়। এখন বুঝি দাদির বেদনার সাগরের গভীরতা ছিল কতখানি। হঠাৎ খবর এল কাকা অসুস্থ। এত বয়স হলাে তবু—তাকে আমি চোখে দেখিনি, তার অনেক গল্প শুনেছি। সেই অসুস্থ কাকাকে দেখতেই আমার বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা।
অতলে রবি : যার জন্যে এত পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম তিনি এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। কয়েক দিন বেদনা বিধুর পরিবেশে সময় কাটল। কাকির নির্দেশমতাে কাকাত ভাইদের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের সমাধি, বাটালি হিলসহ আরাে কয়েকটি ছােট-খাট পাহাড় দেখলাম। এক পর্যায়ে সমুদ্র সৈকত দেখার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে ভাইয়া সেনা ও মুক্ত লাফিয়ে উঠল। ওরা সাথে একটি ক্যামেরা নিল।

বিকালে পতেঙ্গা সৈকতের দিকে যাত্রা করলাম। সেখানে পৌছে দেখি শুধু মানুষ আর মানুষ। ছেলে-মেয়ে, বুড়াে-বুড়ি, যুবক-যুবতী সব বয়সী মানুষের আনাগােনা তীরে শুধু শিলার সূপ । তার ওপরে অনেকেই বসে আছে উদাস দৃষ্টি মেলে। এ চরাচরে সবকিছু ভুলে তারা যেন সংসার বিবাগী । বেলা যত পড়ে আসছে মানুষের ভিড়ও তত বাড়ছে। একমাত্র উদ্দেশ্য সূর্যাস্ত দর্শন। অনেকেই স্পীড বােটে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে। তাদের মধ্যে অসীম উত্তেজনা। যেন আজকে তাদের হারিয়ে যেতে নেই মানা। যুবক-যুবতীদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। অনেকেই হাঁটু জলে নেমে পড়েছে। তাদের সেকি প্রাণােচ্ছ্বল ছুটাছুটি। দূরে নােঙর করা জাহাজের ওপর শেষ বিকেলের সূর্যালােক নয়নকাড়া। এমনিভাবে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। মধ্যাহ্নের সেই প্রখর তেজ ম্লান হয়ে আসছে। তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ জলরাশিতে মানুষের দাপাদাপি থেমে গেছে। তারা এখন জল ছেড়ে ডাঙায়। গায়ে শীতের কাঁপুনি।

রচনাঃ অধ্যবসায়

সবাই এখন সূর্যের অস্ত যাওয়াকে দুচোখ ভরে দেখতে চায়। সূর্যের রং এখন টকটকে লাল। কিন্তু সেই লালে এখন চোখ বাঁধে না; বরং বিস্ফোরিত চোখে তা শুধুই দেখতে ইচ্ছে করে। শুধু নিজের নয় পরের চোখেও তা দেখতে ও স্থায়িভাবে ধারণ করতে ইচ্ছে করে। এ সূর্যাস্ত ক্যামেরায় ধারণ করতে এক হুল্লোড় পড়ে যায়। চন্দ্রগ্রহণ দেখতে খুবই মজা লাগে। অত বড় চাদ কেমন করে আস্তে আস্তে ছােট হয়ে এক সময় অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। সূর্যের অস্ত যাওয়া আরাে চিত্তাকর্ষক। সূর্যকে পেছনে রেখে অনেকেই ছবি তুলছে। কখনাে একাকী, কখনাে শুধুই প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে, আবার কখনাে সবাইকে সাথে করে। ম্রিয়মাণ সূর্যকে নিয়ে এ এক বিচিত্র খেলা, সূর্যালােক অত্যাবশ্যক হলেও প্রখরতার কারণে এর দিকে কেউ দৃষ্টিপাত করে না। কিন্তু অস্তয়মান সূর্যের রূপ অপরূপ। রবি ঠাকুরের ভাষায়,
“চক্ষে আমার তৃষ্ণা-------
একসময় সূর্য অস্ত যায়। পতেঙ্গার আকাশে অন্ধকার নেমে আসে।

ঘরে ফেরা: সৈকতের আশপাশে গড়ে ওঠা দোকানে শামুক-ঝিনুকের তৈরি নয়নকাড়া সামগ্রী কিনে ট্যাক্সিযােগে বাসায় ফিরতে রাত।

উপসংহার : এ বিশ্বে যা কিছু সুন্দর তন্মধ্যে সূর্যাস্ত অন্যতম। চন্দ্র-সূর্য নিয়ে কবি-সাহিত্যিক বহু কাহিনী সৃষ্টি করেছেন। এর কিয়দংশ পাঠে বেশ পুলকিত হয়েছি। আমার স্বচক্ষে দেখা এ সূর্যাস্ত হৃদয়পটে জাগরূক থাকবে বহুকাল।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url