"সাইবার বুলিং" কি কাকে বলে, এর থেকে সুরক্ষিত থাকা এবং শিকার হলে করণীয় কী

"সাইবার বুলিং" (cyber bullying) শব্দটির সাথে আমরা অনেকে পরিচিত। আবার অনেকের কাছেই এটি একটি নতুন শব্দ! তবে আসুন জেনে নেয়া যাক সাইবার বুলিং কি, কোন ধরনের অপরাধকে সাইবার বুলিং বলা হয় এবং সাইবার বুলিং (cyber bullying)  থেকে নিরাপদ থাকার উপায় ও সাইবার বুলিং এর শিকার হলে করণীয় কি এর সম্পর্কে।

সাইবার বুলিং
সাইবার বুলিং কী (what is cyber bullying)? সাইবার বুলিং হচ্ছে একটি ইংরেজী শব্দ। "সাইবার" (cyber) শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, "অনলাইন জগৎ" অর্থাৎ সাইবার শব্দটি দ্বারা অনলাইনে যত প্রকার কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়ে থাকে তাকে বোঝানো হয়। এবং "বুলিং" (bullying) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কাউকে অপ্রত্যাশিত আক্রমণ এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা। বুলিং শব্দটি এসেছে "বুলিজম"   শব্দটি থেকে। "বুলিজম" শব্দটির অর্থ হচ্ছে, " দুজন ব্যক্তির মধ্যে তর্ক বা কথা কাটাকাটির কারণে কোনো ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সামাজিকভাবে হেয় করাকে বুলিজম বলা হয়।

অর্থাৎ উপরোক্ত বিষয় বস্তু হতে আমরা বুঝতে পারি "সাইবার বুলিং (cyber bullying) হচ্ছে অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন ব্যক্তিকে সামাজিক ভাবে হেয় করার জন্য ঘটানো বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ"

কোন ধরনের অপরাধকে সাইবার বুলিং বলা হয়: সাইবার বুলিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, বিশেষত সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকে কিশোর-কিশোরী এবং নারীরা। যেমন বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজে ভাবে মেসেজ পাঠানো। আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও পাঠানো। ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করা হলে পরে সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার এর মাধ্যমে অশ্লীল ছবিতে রুপান্তর করে হয়রানির শিকার করা। সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৩০ বছর এর নিচের বয়সী নারীরা।

অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সাইবার বুলিং এর মাধ্যমে হয়রানির শিকার করে অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটে থাকে। এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সমাজের মানুষ। তারা এটা জেনেও যে এক্ষেত্রে ভিকটিমের কোন দোষ নেই তারপরেও বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তা ছড়িয়ে বেড়ায়। যারা সাইবার বুলিং এর শিকার একজন মানুষকে আরো মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এক্ষেত্রে অনেকের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতাও সৃষ্টি হতে পারে।

তাই পরিবারের কোনো সদস্য "সাইবার বুলিং" এর বা "বুলিজম" শিকার হলে তাকে ভুল না বুঝে তার পাশে দাঁড়াতে হবে। এবং তাকে বোঝাতে হবে এতে তার কোন দোষ নেই। মানসিক ভাবে সাহস যোগাতে হবে। এবং তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে এই সাইবার বুলিং এর প্রতিবাদ করতে।

সাইবার বুলিং এর হাত থেকে যেভাবে সুরক্ষিত থাকবেন: যেহেতু সাইবার বুলিং এর শিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরী এবং নারীরা হয়ে থাকে তাই তাদের এ বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। এ কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের যে সকল দিক গুলো মাথায় রাখতে হবে তা হল:

সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি তে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা বলতে অপরিচিত কোন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে যুক্ত না করাই ভালো, বিভিন্ন ধরনের ফেক আইডি থেকে আসা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টগুলো একসেপ্ট করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, এক্ষেত্রে সবচাইতে ভালো হয় কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে তার সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরের জীবন সম্পর্কে অবগত হয়ে নেওয়া। সর্বোপরি পরিবার-পরিজন বন্ধু-বান্ধব এবং ব্যক্তিগত জীবনে পরিচিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সাথে পরিচিত হয়ে বন্ধুত্ব না করা এবং ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার না করা।

Read More: রোমান্টিক স্ট্যাটাস

সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলোর প্রাইভেসি বজায় রাখা। আমরা আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া গানগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ছোট এবং পোস্ট দিয়ে থাকি। এসকল কিছু আপলোড করার সময় কারা এ ধরনের পোস্টগুলো দেখতে পারবে তা আপনি আগে থেকেই নির্ধারণ করে দিতে পারেন। যেমন আপনার আপলোড করা ছবি বা স্ট্যাটাস শুধুমাত্র আপনার বন্ধু যারা আছে তারাই দেখতে পারবে (Friends), আপনার বন্ধু যারা আছে তাদের বন্ধুরাও দেখতে পারবে (Friend of friend), সবাই দেখতে পারবে (Public)। চাইলে অন্য কেউ দেখতে পারবে না এমন করে রাখতে পারেন (Only Me)। এছাড়াও আপনার আপলোড করা ছবিগুলো কেউ ডাউনলোড যাতে করতে না পারে সেজন্য গার্ড ব্যবহার করতে পারেন।

"সাইবার বুলিং ( cyber bullying) এর শিকার হলে কি করবেন বা আমাদের করণীয় কি": সাইবার বুলিং এর শিকার হলে আমাদের সর্বপ্রথম যেটি করতে হবে তা হল নিজেকে বোঝাতে হবে এখানে আপনার কোন দোষ নেই এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। এবং মাথা ঠান্ডা রেখে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে হবে। প্রথমেই যে সকল ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হতে পারে তাদের একটি তালিকা তৈরি করুন। এরপর সন্দেহের কারণ হিসেবে কিছু প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করুন। হতে পারে তা তাদের পিছনের কোন মেসেজ বা চ্যাটিং এর স্ক্রিনশট। বিগত সময়ে কোন প্রকার হুমকি প্রদান করে থাকলে সেগুলো খতিয়ে দেখতে পারেন।

এসকল প্রমাণগুলো জোগাড় করার পরে আপনার নিকটস্থ থানা কিংবা জরুরী পুলিশ সেবার জন্য 999 পুলিশ হেল্পলাইন এ যোগাযোগ করতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url