ভাবসম্প্রসারণ: উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই! নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!

ভাব-সম্প্রসারণ:

আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে সে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

অথবা,

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই!

নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!


মূলভাব: পরার্থপরতা মানুষের বিশিষ্ট গুণ। এ জগতে কেউ আত্মকেন্দ্রিক জীবন-যাপনের জন্য আসেনি। পরার্থে আত্মোৎসর্গ করার জন্যই পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেছে।

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই!  নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!
সম্প্রসারিত ভাব: আমাদের সমাজে কিছু আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর লোক রয়েছে। তারা সমাজ সংসারের কথা ভুলে নিজেকে নিয়ে অতি ব্যস্ত; অতি বিব্রত থাকে। অথচ সমাজ-সংসারের কাছে প্রত্যেকের ঋণের সীমা-পরিসীমা নেই। মানুষ সামাজিক জীব। সংঘবন্ধ সমাজ জীবনই তাকে দিয়েছে আত্মরক্ষার নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলার অনুকূল পরিবেশ। ব্যক্তি মানুষের কল্যাণে সমাজ যেমন এগিয়ে আসে; সমাজও আশা করে জাতির কল্যাণে ক্ষুদ্র স্বার্থের কথা ভুলে সে সহযোগিতার হাত বাড়াবে, প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে অকুণ্ঠচিত্তে। সংঘবদ্ধ সমাজ জীবনে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা, স্বার্থপর মনোবৃত্তি ও কার্যকলাপ সমাজ বিরোধী। প্রতিটি সামাজিক মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতার যোগসূত্রে আবদ্ধ। সংসারের কেউ একার জন্য আসেনি। একা বাঁচতেও পারে না। আত্মকেন্দ্রিক এককজীবন ভয়ঙ্কর দুঃখময়। সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে বাঁচা যথার্থ বাঁচা। সেজন্য সার্থত্যাগ প্রয়োজন। আত্মকেন্দ্রিকতার শক্ত নিয়ামকটার ধ্বংস প্রয়োজন। পরার্থে আত্মোৎসর্গ জীবন সার্থক হয়, ধন্য হয়। পরহিতে নিজেকে নিয়োগ করে মানুষ প্রকৃত সুখ ও পরম তৃপ্তির অধিকারী হয়।


মন্তব্য : ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে মানবতার স্বার্থকে বড় করে দেখার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত স্বার্থকতা। তাই প্রত্যেক মানুষকেই পরার্থে আত্মনিয়োগ করা উচিত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url