ব্লাডপ্রেসার কেন হাই হয় এবং প্রেসার হাই হলে আমাদের করণীয়

হাই ব্লাড প্রেসার (High Blood Pressure) মূলত উচ্চ রক্তচাপ। যখন আমাদের শরীরে রক্তচাপের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন বোঝা যায় আমাদের প্রেসার বেড়ে গিয়েছে বা আমরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছি। হাই ব্লাড প্রেশার সার মূলত একটি দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা। এটি আমাদের শরীরের প্রচন্ড পরিমাণে ক্ষতি করে থাকে এবং এর ফলে বিভিন্ন মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে আমাদের শরীরে। তবে প্রেসার হচ্ছে আলাদা কোনো রোগ নয় এটি আমাদের রক্তচাপের একটি মাত্রা যখন এই মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন বলা হয় হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ। আসুন জেনে নেই প্রেসার হাই হওয়ার লক্ষন, কারন এবং প্রেসার বেড়ে গেলে কমানোর উপায় অর্থাৎ এসময় আমাদের করনীয় কি!
আমাদের ব্লাড প্রেসারের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০। তাহলে আমার যখন দেখবো আমাদের প্রেসার মাত্রার মধ্যে আছে কোন প্রকার চিন্তার কারন নেই।তবে এই মাত্রা বিভিন্ন বয়সেে মানুষের সামান্য তারতম্য হতে পারে।বয়স্কদের ক্ষেত্রে একটু বেশি হয় এই মাত্রা।কিন্তু যখন এই মাত্রা ৯০-১৪০ এর কাছাকাছি চলে যায় তখন বুঝতে হবে প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছে।এবং তখন এই মাত্রা স্বাভাবিক করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবে এটি বোঝার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রেসার পরিমাপ করা। কিন্তু প্রেসার মাপার যন্ত্র সচরাচর সবার বাড়িতে বা কাছে থাকে না। তাই আমাদের এর কিছু লক্ষন থেকে বুঝে নিতে হবে যে প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছে। 

চলুন প্রেসারের লক্ষণগুলো আমরা জেনে নেই-
ব্লাড  প্রেসার যখন হাই হয়ে যায় তখন মাথা ঘুরে। তবে সবার ক্ষেত্রে ঠিক হয় না। কিন্তু সচরাচর এর লক্ষণ  পরিলক্ষিত হয়। তাই যখন বুঝবেন আপনার মাথা ঘুরছে এবং চোখে  অস্পষ্ট দেখছেন ধরে নিতে হবে আপনার প্রেসার বৃদ্ধি পেয়েছে।

এরপরে প্রেসার এর পরিমাণ বেড়ে গেলে মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে।  মাথার পিছন দিকে ব্যথা হতে পারে। মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে।

শরীর অত্যধিক পরিমাণে দুর্বল ভাবা। বুক ধড়ফড় করা। হাত পায়ে জোর কমে আসা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

নাক দিয়ে রক্ত পড়া। কোন কারন ছাড়াই যেমন,কেন আঘাত প্রাপ্ত হওয়া।চোট লাগা ইত্যাদি ছাড়াই এমনি এমনি নাক থেকে রক্ত পড়তে পাড়ে।

কোন বিষয়ের প্রতি মনোযোগ নষ্ট হয় যেমন কোন কাজ করা অবস্থায় কাজের মনযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এ সকল কিছু ঘটলে বুজতে হবে আপনার প্রেশার হাই হয়েছে।
ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ হাই হওয়ার কারণ সমূহ-
হাইপারটেনশন বা হাই প্রেশার বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে এ সকলের মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে,প্রতিদিন খাবারের সাথে অতিরিক্ত পরিমাণ লবন খাওয়া এর একটি অন্যতম কারন।কারন লবন খুব দ্রুত আমার ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দেয়।আমাদের দেহে প্রতিদিন ছয় গ্রাম লবনই যথেষ্ট। কিন্তু এর থেকে বেশি পরিমাণ লবন খেলে আমাদের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়।তাছাড়া কাচা লবন অর্থাৎ আমার খাবারে রান্না করার সময় যে লবন দেই তার বাইরে খাবার সময় যে লবন খাই এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হাইপারটেনশনের অন্যতম এবং ভয়াবহ একটি কারন।এর ফলে হটাৎ করে খুব দ্রুত ব্লাডপ্রেসার বৃদ্ধি পায় এবং স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে এই দুশ্চিন্তা থেকে।

অতিরিক্ত পরিমাণ এ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য গ্রহন সেবনকারীর ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। স্ট্রেসের কারনেও ব্লাড প্রেসার বাড়েে। অতিরিক্ত স্ট্রেসের শিকার হলে হাইপারটেনশন হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। এছাড়াও এটি বংশগত ভাবেও হতে পারে। অনেকেরই বংশগত কারনে এটি হয়ে থাকে।

হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের কারনে আমাদের যেসকল ক্ষতি হয়-
এটিকে বলা হয় নিরব ঘাতক।এটি আমাদের শরিরে দীর্ঘদিন একই অবস্থায় থাকলে এটি একদিকে যেমন স্ট্রোক,হৃদরোগ ইত্যাদি হতে পারে তেমনি হাইপ্রেসারের কারনে আমাদের হৃদযন্ত্র দ্রুত পাম্প করে এবং হার্টের উপর প্রচন্ড পরিমাণ প্রেশার পরে তেমনি আমাদের দেহের ধমনীর দেওয়ালে চাপ দেয় এর ফলে একদিন হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার পাশাপাশি ধমনী ফেটে রক্তক্ষরণ হতে পারে।এটি আমার ব্রেইনে রক্তক্ষরন ঘটে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।এর পাশাপাশি কিডনি বিকল সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ রোধে আমাদের করনীয়-
উচ্চ রক্তচাপ রোধে আমাদের সচেতনতাই হতে পারে একমাত্র সম্বল। কারন সচেতন জিবনযাপন উচ্চ রক্তচাপ রোধে অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। নিয়মিত হাঁটার ফলে আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।নিয়মিত আধা ঘন্টা হাটলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।এছাড়া অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার আমাদের শরীরের প্রেসার কে বাড়িয়ে তোলে।

অতিরিক্ত পরিমাণ লবন খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে। আমাদের একজন মানুষের দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ গ্রাম পরিমাণ লবন খাওয়া উচিত। যার প্রতিদিনের খাদ্যের মাধ্যমে-ই পূরন হয়ে যায়। তাই অতিরিক্ত কোন লবন খাওয়ার দরকার পড়ে না। কিন্তু অনেকেই অতিরিক্ত পরিমান লবন খেয়ে থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের অন্যতম কারন।

চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা  রক্তচাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও নানা জটিল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। এটি যেমন প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকে তেমনি শরীরের অন্যান্য রোগের হাত থেকেও সুস্থ থাকা যায়।
Next Post Previous Post