প্রতিদিন সুস্থ থাকার কিছু উপায়

সুস্থ ও সুন্দর জীবন আমাদের সকলেরই কাম্য। আর সে কারণেই আমাদের সকলকে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। সারা জীবন বা দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার উপায় গুলো আমাদের সকলের জানা উচিত। কারন সুস্থ থাকার উপায় গুলো আমাদের জানা থাকলেইতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবো আমরা কারন কথায় আছে, "স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল"


কিন্তু সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা আমরা জানা স্বত্বেও  আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেই না। এবং বিভিন্ন অবহেলার কারণে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকি। এছাড়াও বিভিন্ন অজ্ঞতার কারণে আমাদের স্বাস্থ্যের হানি ঘটে থাকে। আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক এই স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন নয়। আর এ কারনেই বিভিন্ন জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে খুবই সহজে। সুস্থ থাকা অবস্থায় আমরা কখনো এটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি না যে শুধুমাত্র একটু সামান্য প্রচেষ্টা আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল ও সতেজ রাখতে পারে।আসুন আমরা সুস্থ থাকার জন্য কয়েকটি বিষয়ে জেনে নেই-
সুস্থ থাকার উপায়
আমাদের স্বাস্থ্য কে ভালো রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। একটি মানুষের উচিত প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমান ঘুমের। একটি মানুষের দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুমের দরকার। কারন ঘুমের ফলে আমাদের শরীরের ক্লান্তি দুর হয় এবং মানুষের শরীরে নতুন কাজ করার সামর্থ্য যোগ হয়। একটি মানুষের কমপক্ষে দৈনিক আট ঘন্টা ঘুমানো উচিত ঠিকই কিন্তু ঘুমানোরও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। অনিয়মিত নিয়মে ঘুমালে আমাদের উপকারের চাইতে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। ঘুমাতে যাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আমাদের সবার ঘুমানো উচিত রাত দশটার পরপরেই। বেশি রাত জাগা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভাল নয়। এবং ঘুম থেকে উঠতে হবে সকাল ৬টার ভিতর।

আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা অনেক রাত অব্দি জেগে থাকে এবং সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি করে। কিন্তু এ গুলো স্বাস্থ্যের জন্য অনেক হানি কারক সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠলে সকাল বেলার নির্মল আবহাওয়া আমরা উপভোগ করতে পারি। এ কারনে সকালে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের স্বাস্থ্য এবং মন দুটোই ভালো থাকে।
তাই আমাদের রাত জাগা পরিহার করে আগে আগেই ঘুমিয়ে যেতে হবে এবং ভোর হলে ঘুম থেকে উঠতে হবে। সকাল বেলার রোদ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে শারীরিক-মানসিক উপকারিতার বাইরেও অনেক সুফল পাওয়া যায়।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা একটি অন্যতম বিষয়। আমরা মূলত  স্বাদ যুক্ত খাবার বেশি পছন্দ করি। কিন্তু বিবেচনা করি না যে খাবারটি কতটুকু পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত। এর ক্ষতিকর দিক  নিয়েও কখনো ভাবার চেষ্টা করি না। তবে আমাদের খাবারের স্বাদের কথা বেশি চিন্তা না করে এর পুষ্টি মানের দিক এবং কতটা স্বাস্থ্যকর সে বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। এবং বেশি পরিমাণ শাকসবজি খাওয়া উচিত। কারণ শাক সবজিতে চর্বি থাকেনা  এবং বেশি পরিমাণ ভিটামিন ও বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পুষ্টি ও ভিটামিন যুক্ত খাবার আমাদের দেহের ক্ষয় পূরন ও বৃদ্ধি সাধন করে।

এছাড়াও পুষ্টিকর খাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল চর্বি ও অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত। কারন অতিরিক্ত তেল এবং মসলা যুক্ত খাবার বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির কারন হতে পারে। অতিরিক্ত মসলা গ্যাস্ট্রিক এবং এসিডিটির কারন হতে পারে।

পানি আমাদের দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পানির অপর নাম জিবন। খাদ্য ছাড়া আমরা কয়েকদিন বেচে থাকতে পারলেও পানি ছাড়া বেচে থাকা একদম অসম্ভব। পানি আমাদের দেহের জন্য অন্যতম পরিস্কারক হিসেবে কাজ করে। একটি পূর্ন বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩-৪ লিটার পানি পান করা উচিত। এবং সকাল বেলা খালি পেটে পানি পান করার ফলে বিভিন্ন শারিরীক জটিলতা দূর হয়!


পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই শেষ কথা নয় সেই সাথে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহন আমাদের শরিরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের সকালের খাবার সকাল ৮ টার ভিতর, দুপুরের খাবার ২ টার ভিতর এবং রাতের খাবার রাত ৮ টার ভিতরে খেতে হবে। এতে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে। সকালের খাবার হচ্ছে শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকালে অনেকেই হালকা নাস্তা করে কিন্তু এটা ঠিক নয়। এ সময় আমাদের  পুষ্টিকর এবং একটু ভারী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। কারণ সকালের খাবার আমাদের সারাদিনের এনার্জি জোগাড় করে। অপরদিকে দুপুরের খাবার বেশি বেলা করে  গ্রহণ করলে সেটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।  দুপুর তিনটার পরে  খাবার গ্রহণ করলে তা আমাদের শরীরের মেদ আকারে জমা হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করা উচিত। রাতে  চর্বি যুক্ত এবং ভারী খাবার না খাওয়া উত্তম। কারণ আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন আমাদের হজম শক্তি কম থাকবে। আর এর ফলে রাতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই ধুমপান এবং বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ ধূমপান এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য প্রচণ্ড  ক্ষতিকর। ধূমপান করলে সিগারেটের নিকোটিন আমাদের ফুসফুসে জমা হয়। এবং সারা দেহের ক্ষতি সাধন করে। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত। এগুলো আমাদের একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতি করে তেমনি আমাদের দেহের ও প্রচন্ড ক্ষতি করে। ধূমপানের কারনে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মত জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

স্বাস্থকর অভ্যাগ গুলোর মধ্যে ব্যায়াম করা অন্যতম। ব্যায়াম করা  স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  ব্যায়াম করলে আমাদের দেহের বেশি সবল হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দেহকে সচল রাখতে আমাদের প্রত্যেকের ব্যায়াম করা উচিত। এর ফলে দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়  নতুন কোষ জন্ম নেয় এবং শরীরের মেদ কমে এছাড়াও শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম এর কোন বিকল্প মাধ্যম নেই।

সকল কিছুর পাশাপাশি সুস্থ থাকতে বিনোদন হলো অন্যতম একটি উপাদান। বিনোদন আমাদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারে। কিন্তু আমরা যারা সুস্থ থাকতে চাই তারা সুস্থতার অন্যতম উপাদান বিনোদন কে অগ্রাহ্য করি। খেলাধুল একটি বিনোদন এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর ফলে শারিরিক ব্যায়াম ও হয়। এবং প্রতিটি মানুষের খেলাধুলা করা উচিত।খেলাধুলা করলে শরিরের মাংস পেশি অনেক শক্তিশালি হয়।


উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে খুব সহজেই যে কোন রোগ আমাদের আক্রান্ত করতে পারবে না। তাই আমাদের এসকল বিষয় মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url