মৃত্যু কি এবং বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

মৃত্যু শব্দটি হচ্ছে চিরন্তন সত্য কারণ এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলে অবশ্যই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।এই সত্যকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে হয়তো আমাদের আয়ু দীর্ঘায়িত হয়েছে আমরা বিভিন্ন প্রকার  জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছি।তবে আমরা কেউই বলতে পারি না কে কখন মৃত্যুবরণ করবে।আমাদের সকলেরই একদিন না একদিন মৃত্যু বরণ করতে হবে এটাই সত্য।
বিজ্ঞানের ভাষায় মৃত্যু হচ্ছে প্রান আছে এমন জৈব বস্তু অর্থাৎ   জীবের জীবনের পরিসমাপ্তি কি মৃত্যু বলা হয়।অন্য দিক দিয়ে বলা যায়,মৃত্যু হচ্ছে এমন অবস্থা যখন জিবের শ্বসন,কাজ-কর্ম,খাদ্য গ্রহন অর্থাৎ যাবতীয় জাগতিক কাজ বন্ধ হয়ে যায়। 
মৃত্যু হওয়ার পরেও আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জীবিত থাকে যেমন,মারা যাওয়ার ৫ মিনিট পরে মাথার কোষগুলোর মৃত্যু ঘটে।আবার হৃৎপিন্ডের কোষগুলো থাকে ১৫ মিনিট জিবিত।বৃক্কের গুলো প্রায় ৩০ মিনিট পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকে।আর এর জন্যই মৃত্যুর পরে দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অন্যের শরীরে প্রতি- স্থাপন করা যায়।
আসুন তাহলে আমরা জেনে নেই বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্ধে মৃত্যু সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
মৃত্যু সম্পর্কে হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থ শিব পুরানে বলা হয়েছে,
যদি কোন ব্যক্তি আকাশের ধ্রুবতারা  দেখতে না পান তাহলে সে  জানবে তার আয়ু অস্তাচলে।
মৃত্যুর সব থেকে বড় ট্রাক লক্ষণ টের পাওয়া যাবে দেহের ভিতর পুরান মতে, কোন ব্যক্তির দেহে  হলদেটে ভাব,এবং তাতে রক্ত বর্ন  আভা থাকে তবে বুঝতে হবে তার মৃত্যুর সন্নিকটে রয়েছে।
মৃত্যুর আগে সবকিছুই কৃষ্ণবর্ণ হয়ে যাবে।এবং মৃত্যুপথযাত্রীর কান, চোখ, নাক, জিভ পাথরের মত হয়ে যাবে।
যদি কেউ নিজের ছায়া দেখতে না পান তিনি জানবেন তার ঘাড়ের কাছে মৃত্যু নিশ্বাস ফেলছে।
তবে মৃত্যু সম্পর্কিত সকল ব্যাখ্যা থাকলেও হিন্দুরা কি বিশ্বাস করে যে মৃত্যু হয় শুধুমাত্র দেহের আত্মার মৃত্যু হয় না।এবং আত্মার পুনরায় নতুন দেহ ধারণ করে।এবং পুনর্জন্ম হয়।এবং আত্মা যখন এভাবে পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে করতে সম্পূর্ণ পাপমুক্ত হয়ে তখন ঈশ্বর প্রাপ্তি হয় এবং পুনরায় আর জন্মগ্রহণ করেনা।তবে সৎ কাজ করলে মানুষ স্বর্গে যায়।কিন্তু স্বর্গসুখ চিরস্থায়ী না একটা সময় স্বর্গসুখ শেষ হয়ে যায়।পূণ্যফলের উপর ভিত্তি করে  স্বর্গ সুখ প্রদান করা হয়।এবং আরো সভ্য শেষ হলে পুনরায় আবার জন্ম গ্রহণ করতে হয়।
এবার জেনে নেয়া যাক ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্যু নিয়ে কি বলা হয়েছে,
মৃত্যু হচ্ছে আখিরাতের প্রবেশদ্বার।
মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের ইহজাগতিক সকল কিছুর পরিসমাপ্তি ঘটে।
মালাক উল মউত, যাকে আজরাইলও বলা হয় মৃত্যুকালে সে এসে মানব দেহ থেকে আত্মা বের করে নিয়ে যায়।এবং এটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা আছে যে ব্যক্তি সৎ এবং ধার্মিক তার মৃত্যু হয় কম যন্ত্রণাদায়ক। পক্ষান্তরে অসৎ এবং খারাপ লোক জনের মৃত্যু হয় বেদনাদায়ক।
মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পাদনার পর তার নিকট মুনকার-নকীর নামক নীল চোখ এবং কালো গাত্রবর্ন বিশিষ্ট দুইজন প্রশ্নকারী ফেরেশতার আসে তাঁরা মৃত ব্যক্তির ঈমান তথা বিশ্বাস পরীক্ষার জন্য তাকে প্রশ্ন করে থাকেন। সৎ বিশ্বাসী ব্যক্তি তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে এবং তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্ত অসৎ অবিশ্বাসী ব্যক্তিরা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না যার ফলে ফেরেশতারা তাদের জন্য কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। 

খ্রিস্ট ধর্ম মতে মৃত্যু পরবর্তী সময় হচ্ছে এমন একটি সময় যে সময় দেহের মৃত্যু ঘটলেও তার ইহজাগতিক আত্মপরিচয় এবং অস্তিত্বের রেশ বা চেতনা থেকে যায়।তবে কৃষ্টি ও চিন্তাধারার মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ পার্থক্য দেখা যায়। কেউ মনে করেন, মৃত্যুর পর শেষ বিচারের আগে পর্যন্ত সকলেই ঘুমিয়ে থাকে এবং তারপর, সকলকেই স্বর্গে অথবা নরকে পাঠানো হবে। আবার অনেকে মনে করেন, মৃত্যুর মুহূর্তেই লোকদের বিচার শুরু হয়ে যায় এবং অনন্তকালীন চূড়ান্ত গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।এবং তাদের মধ্যে অনেকে এটা বিশ্বাস করে যে মৃত্যুর পরে তাদের একটি অস্থায়ী স্বর্গ বা নরকে পাঠানো হয় যেখানে বসে তারা অনন্তকালের গন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করবে।
তবে তারা এটা বিশ্বাস করে পুনরুত্থানের সময় যীশু তাদের সবাইকে পাপমুক্ত করবেন।
উপরোক্ত ধর্ম ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে মৃত্যু সম্পর্কে।সেগুলো তুলে ধরা একটি পোস্টের  মাধ্যমে সম্ভব নয়।এবং প্রতিটি ধর্মের মৃত্যু সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে। 
এ হচ্ছে শুধুমাত্র একটি ধারণা ব্যতীত আর কিছুই না।তারান বিস্তারিত বলতে গেলে কয়েকটি পোষ্টেও শেষকরা সম্ভব নয়।তবে এর ভিতরে কোন ভুল করে থাকলে ক্ষমা করবেন।যদি ভুল হয়ে থাকে সেটা অনিচ্ছাকৃত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url