নেকলেস লেখক গী দ্য মোপাসাঁ অনুবাদ:পূর্ণেন্দু দস্তিদার পর্ব-১

নেকলেস একটি অসাধারন গল্প যেটির লেখক গী দ্য মোপাসাঁ বাংলা অনুবাদ করেন পূর্ণেন্দু দস্তিদার। গল্পটি খুবই সুন্দর। আপনি পড়লে অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে। তাই এই কারণে আমরা গল্পটি তিনটি পর্ব করে আমাদের সাইটে আপডেট করেছি।আশাকরি সম্পুর্ন গল্পটি পড়বেন।
নেকলেস-গী দ্য মোপাসাঁ
সে ছিল চমৎকার এক সুন্দরী তরুণী। নিয়তির ভুলে যেন এক কেরানীর পরিবারে তার জন্ম হয়েছে।তার ছিলনা কোন আনন্দ, কোন আশা,পরিচিত হবার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেম লাভ করার এবং কোন ধনী অথবা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে বিবাহিত হওয়ার কোন উপায় ছিল না।তাই শিক্ষা পরিষদ অাফিসের সামান্য এক কেরানির সঙ্গে বিবাহ সে স্বীকার করে নিয়েছিল।

নিজেকে সজ্জিত করার অক্ষমতার জন্য সে সাধারণভাবেই থাকতো। কিন্তু তার শ্রেণীর অন্যতম হিসেবে সে ছিল অসুখি। তাদের কোন জাতি, বর্ণ নেই। কারণ জন্মের পরে পরিবার থেকেই তার শ্রী সৌন্দর্য ও মাধুর্য সম্পর্কে সজাগ হয়ে ওঠে।সহজাত চাতুর্য,  সুরুচি আর বুদ্ধির নমনীয়তায় হলো তাদের আভিজাত্য, যার ফলে অনেক সাধারন পরিবারের মেয়েকে ও বিশিষ্ট মহিলার সমকক্ষ করে তোলে।

 সর্বদা তার মনের দুঃখ। তার ধারণা,যতসব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে, সে গুলোর জন্যই তার জন্ম হয়েছে। তার বাস কক্ষের দারিদ্র, হতশ্রী দেয়াল, জীর্ণ চেয়ার এবং বিবর্ণ জিনিসপত্রের জন্য সে ব্যতীত হতো। তার মতো অবস্থার অন্য কোন মেয়ে এসব জিনিস যদিও লক্ষ্য করতো না,সে এতে দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হত। যে খর্বকায় ব্রেটন এই সাধারণ ঘড়টি তৈরি করেছিল তাকে দেখলেই তার মনের বেদনা ভরা দুঃখ আর বেপরোয়া সব স্বপ্ন জেগে উঠতো। সে ভাবতো তার থাকবে প্রাচ্য- চিত্র -শোভিত, উচ্চ ব্রঞ্চের আলোক মন্ডিত পার্শ্ব কক্ষ। আর থাকবে দুজন বেশ মোটাসোটা গৃহ ভৃত্য। তারা খাটো পায়জামা পড়ে যেই বড় আরামকেদারা দুটি নরম করার যন্ত্র থেকে বিক্ষিপ্ত ভারী হাওয়ায় নিদ্রালু হয়ে উঠছে তাতে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। সে কামনা করে একটি বৈঠকখানা পুরনো রেশমি পর্দা সেখানে ঝুলবে। থাকবে তাতে বিভিন্ন চমৎকার আসবাব যার ওপর শোভা পাবে অমূল্য সব প্রাচীন কৌতূহলোদ্দীপক সামগ্রী। যেসব পরিচিত ও আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ সব মেয়েদের কাম্য সেসব অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে বিকাল 5 টায় গল্পগুজব করবার জন্য ছোট সুরভিত একটি কক্ষ সেখানে থাকবে।
তিনদিন ধরে ব্যবহৃত একখানা টেবিল ক্লথ ঢাকা গোল একটি টেবিলে তার স্বামীর বিপরীত দিকে সে যখন সন্ধ্যা ভোজে বসে এবং খুশির আমেজে তার স্বামী বড় সুরুয়ার পাত্রটির ঢাকনা তুলতে তুলতে বলে:ও! কি ভালো মানুষ!
এর চেয়ে ভালো কিছু আমি চাই না- তখন তার মনে পড়বে আড়ম্বরপূর্ণ সন্ধ্যা ভোজের কথা, উজ্জ্বল   রৌপ্যপাত্রাদি, মায়াময় বনভূমির মধ্যে প্রাচীন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিরল পাখি চিত্রসহ কারুকার্য পুর্ন পর্দা দিয়ে ঢাকা দেওয়ালের কামনা। সেভাবে অপরূপ পাত্রে পরিবেশিত হবে অপূর্ব খাদ্য আর গোলাপি রঙের রোহিত মাছের টুকরা অথবা মুরগির পাখনা খেতে খেতে মুখে সিংহ মানবীয় হাসি নিয়ে কান পেতে শুনবে চুপিচুপি বলা প্রণয়লীলা কাহিনী।

 তার কাছে ফ্রক বা জড়ানো গহনা নেই- নেই বলতে  কিছু নেই। অথচ ঐ সব বস্তুই তার প্রিয়। তার ধারণা ওইসব এর জন্যই তার সৃষ্টি। সুখী করার, কাম্য হওয়ার, চালাক ও প্রণয়যাচিকা হবার কতইনা তার ইচ্ছা।

 তার 'কনভেন্টের' সহপাঠিনী এক ধনী বান্ধবী ছিল। তার সঙ্গে দেখা করতে তার ভালো লাগতো না। কারণ দেখা করে ফিরে এসে তার খুব কষ্ট লাগতো বিরক্তি, দুঃখ, হতাশা ও নৈরাশ্যে সমস্ত দিন ধরে সে কাঁদত।

 এক সন্ধ্যায় হাতে একটি বড় খান নিয়ে বেশ উল্লাসিত হয়ে তার স্বামী ঘরে ফিরল-

 সে বলল,'এই যে,তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি!

 মেথি তাড়াতাড়ি খামতি ছিল তার ভিতর থেকে খানা ছাপানো কার্ড বের করল। তাতে নিচের কথাগুলি মুদ্রিত ছিল:

' জনশিক্ষা মন্ত্রী ও মাদাম জর্জ রেমপন্নু আগামী ১৮ ই  জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাহাদের নিজ বাসগৃহে মসিয়ে ও মাদাম লোইসেলের উপস্থিতি কামনা করেন।'

 তার স্বামীর যেমন আশা করেছিল তেমন ভাবে খুশি হওয়ার পরিবর্তে মেয়েটি বিদেশের ভাব নিয়ে আমন্ত্রণ-লিপি খানা টেবিলের উপর নিক্ষেপ করে,বিড়বিড় করে বলল:

' ওখানা নিয়ে তুমি আমায় কি করতে বল?'

 'কিন্তু লক্ষীটি আমি ভেবেছিলাম এতে তুমি খুশি হবে! তুমি বাইরে কখনো যাও না তাই এই সুযোগ, চমৎকার এক সুযোগ!

 এটা জোগাড় করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে! সবাই একখানা চায়, কিন্তু খুব বেছে বেছে দেওয়া হচ্ছে কর্মচারীদের বেশি দেওয়া হয়নি। সেখানে তুমি গোটা সরকারি মহল কে দেখতে পাবে।'

 বিরক্তির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি অধীর ভাবে বলে উঠলো:

 সে ঐ সম্পর্কে কিছু ভাবেনি। তাই সে বিব্রত ভাবে বলে-

 কেন আমরা থিয়েটারে যাবার সময় তুমি যে পোশাকটা পড়ো সেটা পড়বে। ওটা আমার কাছে খুব সুন্দর লাগে-'

 তার স্ত্রীকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে সে আতঙ্কে নির্বাক হতবুদ্ধি হয়ে গেল।তার চোখের পাশ থেকে বড় বড় দুঃফোটা অশ্রু তার গালের উপর গড়িয়ে পড়ল। সে থতমত ভাবে বলল-

' কি হল?কি হল তোমার?'

 প্রবল চেষ্টায় মেয়েটি তার নিজের বিরক্তি দমন করে,তার সিক্ত গন্তু  মুছে ফেলে শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়:

 কিছুই না শুধু আমায় কোনো পোশাক নেই বলে আমি ওই ব্যাপারে যেতে পারবো না। তোমার যে কোনো সহকর্মীর স্ত্রীর পোশাক আমায় চেয়ে যদি ভাল থাকে কারখানা নিয়ে তাকে দাও।

 সে মনে মনে দুঃখ পায়।তারপর সে জবাব দেয়:

'মাতিলদা, বেশতো চলো আলাপ করি আমরা। এমন কোন পোশাক, অন্য কোন উপলক্ষেও যা দিয়ে কাজ চলবে অথচ সাদাসিধা, তার দাম আর কত হবে?

 কয়েক সেকেন্ড মেয়েটির চিন্তা করে দেখে এমন একটি সংখ্যার বিষয়ে স্থির করলো যার চেয়ে বসলে হিসেবে রাণীর কাছ থেকে সঙ্গে সঙ্গে এক আতঙ্কিত প্রত্যাখ্যান যেন না আসে।

 শেষপর্যন্ত ইতস্তত করে মেয়েটি বলল:


' আমি ঠিক করতে পারছি না,তবে আমার মনে হয় 400 ফ্রাঁ হলে তা কেনা যাবে'

 শুনে তার মুখ ম্লান হয়ে গেল। কারণ,তার যেসব বন্ধু গত রবিবারে নানতিয়ারের সমভূমিতে ভরতপাখি শিকারে গিয়ে ছিল, আগামী গ্রীস্মে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা একটি বন্দুক কিনবার জন্য ঠিক ততটা অর্থই সে সঞ্চয় করেছিল।তা সত্ত্বেও জবাব দিল:

নেকলেস লেখক গী দ্য মোপাসাঁ অনুবাদ:পূর্ণেন্দু দস্তিদার পর্ব-২
Next Post Previous Post