রোবটিক্স কি এবং রোবট এর বিস্তারিত আলোচনা-what is robotics engineering bangla


রােবটিকস সম্পর্কে ধারণা বা মতপ্রকাশ বহুকাল আগ থেকে প্রচলন রয়েছে। যিশুখ্রিষ্টের জন্মের ৩২০ বছর আগে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টোটল রােবটিকস সম্পর্কে একটি সংজ্ঞা দেন, তাঁর মতে,“যদি প্রতিটি যন্ত্রাংশ বা টুলস আদেশ বলে বা তার নিজের ইচ্ছায় (নির্ধারিত প্রােগ্রাম) কোনাে কাজ প্রার্থিত মানে সম্পন্ন করতে পারে তখন প্রশিক্ষকের জন্য প্রশিক্ষণার্থী বা প্রভুর জন্য চাকরের প্রয়ােজন হবে না।” ১৯২০ সালে চেকোস্লোভাকিয়ান নাট্যকার Karel Capek সর্বপ্রথম তার নাটকে রােবট শব্দটি ব্যবহার করেন, যার নাম ছিল Rossum's Universal Robots (RUR)।রােবট শব্দটি চেক শব্দ Robota থেকে এসেছে, যার অর্থ হলাে ক্লান্তিকর শ্রম। এরপর দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ১৯৪১ সালে বিজ্ঞান কথাসাহিত্যিক আইজাক আশিমাে তার ছােটগল্পে (Lira) সর্বপ্রথম রােবটিকস শব্দটির ব্যবহার করেন। এ কারণে বর্তমান আধুনিক রােবটিকসের পথপ্রদর্শক হিসেবে তাকে এ কৃতিত্ব দেয়া যায়।

Rrobotics কি
তিনি তাঁর গল্পে যে কাল্পনিক মেশিনের কথা উল্লেখ করেছিলেন সেখানে মেশিন কী নিয়ম মেনে কাজ করবে,তারও উল্লেখ করেন।
১. কল্পিত মেশিন (রােবট) কখনাে মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে না ।
২. এটি ১নং-এ বর্ণিত শর্ত লঙ্ঘন না করে মানুষের নির্দেশ মােতাবেক কাজ করবে ।
৩. অন্যান্য শর্ত লঙ্ঘন না করে রােবট নিজেদের রক্ষা করবে।


আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, ছােটগল্পের সেই কাল্পনিক মেশিনের জন্য যে নিয়ম করা হয়েছিল তা বর্তমান সময়ের আধুনিক রােবটের জন্য হুবহু কাজ করছে। ঐতিহ্যগতভাবে মানুষ তার কর্ম সম্পাদন করার জন্য মেশিনের (রােবট) নকশা, গঠন ও ব্যবহার ক্রমাগত সম্পন্ন করছে। গাড়ি কারখানায় কিছু সাধারণ কাজ যেগুলাে বারবার করতে হয়, সেখানে রােবট-এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। তাছাড়া যেখানে কাজ করা মানুষের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে রােবট অত্যন্ত।
নিখুত ও সফলভাবে কাজ করতে সক্ষম। রােবটিকসের অনেক দিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে জড়িত। মানুষের অনুভূতি যেমন দৃষ্টি, স্পর্শ এবং তাপমাত্রার অনুভূতি ইত্যাদিকে রােবটের কার্যক্রমের সাথে সমতুল্য করে পরিচালনা করা যায় ।
এদের মধ্যে কিছু আবার সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম। রােবটিকস্ হলাে প্রকৌশল বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে রােবট সম্পর্কিত ধারণা, নকশা, উৎপাদন, কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। এটি কখনাে কখনাে ইলেকট্রনিক্স,কম্পিউটার বিজ্ঞান, ন্যানােটেকনােলজি, বায়ােটেকনােলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রের আওতায় পড়ে।
Part of Robot
রােবটের উপাদানসমূহ:
i. কন্ট্রোলার/প্রসেসর
ii. পাওয়ার সিস্টেম
iii. অ্যাকচুয়েটর
iv. সেন্সর
v. ম্যানিপুলেশন।

ক্ষেত্রবিশেষে এর উপাদানসমূহ পরিবর্তিত হতে পারে।
উপরের উপাদানগুলােকে আবার নিচের মতাে বর্ণনা করা যায়-
১. যান্ত্রিক অংশ যেমন- চাকা, গিয়ারবক্স, চলমান হাত ইত্যাদি যার সাহায্যে একটি রােবট চলমান হবে।
২. বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ যেমন- মােটর, তার, কম্পিউটিং ইউনিট ইত্যাদি।
৩. সেন্সর যেমন- আলাে সংবেদনশীল ও চুম্বকীয় সংবেদনশীল ইউনিট ইত্যাদি।

রােবটিকস-এ বাংলাদেশের প্রাপ্তি:
Bbangladeshi Robot Chonrdrabot 2


২০১২ সালের ২১-২৬ মে আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল National Aeronautics and Space Administration (NASA) কর্তৃক আয়ােজিত তৃতীয় বার্ষিক Lunabotics Mining Competition (LMC)। এতে
অংশগ্রহণ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযােগীরা। তাদের প্রদর্শিত রােবটিকস মডেলের নাম ছিল "ChondroBot -2"।
সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশের এ রােবটটি ১২তম অবস্থান লাভ করেছিল। আর এশিয়ার মধ্যে এর অবস্থান ছিল প্রথম। ২০১৩ সালে সারা পৃথিবী থেকে ৫০টি দেশ অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে আমাদের দেশ থেকে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে। চূড়ান্ত প্রতিযােগিতায় বাংলাদেশ মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনােলজি (MIST) ৩টি ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান লাভ করে। তাদের রােবটের নাম ছিল “MIST লুনা রােবটিকস একুশ” । আশা করা যায়, আমাদের রােবটিকস মডেল হয়তােবা ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে পাঠানাের জন্য মনােনীত হবে।

রোবটের ব্যাবহার:
১. বিরক্তিকর এবং একঘেয়ে কাজের ক্ষেত্রে
২. শিল্প-কলকারখানার ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে
৩. মহাকাশ ও পারমাণবিক গবেষণার ক্ষেত্রে
৪. নিরাপত্তায় ও পর্যবেক্ষণের কাজে।
রোবটের অসুবিধা:
১. মানুষ যা চিন্তা করে ঠিক তার বিপরীতে কোনাে একটি কাজ করতে উৎসাহী হয়। এ রকম একটি কাজ কোনাে একটি যন্ত্র দিয়ে করানাের জন্য সার্কিট ডিজাইন ও তা পরিচালনার জন্য প্রােগ্রাম তৈরি করা কঠিন কাজ বটে। পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে মানুষ তার গতিকে নিয়ন্ত্রণ ও খাপ খাইয়ে নিতে পারে; কিন্তু রােবটিকসের বেলায় সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত ও সীমিত বিকল্প সমাধান পথ দেয়া থাকে ।
২.বিশ্বের যে সকল দেশের মানুষ রােবটের মতাে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে (যেমন- চীন,ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি) তাদের ক্ষেত্রে রােবটিকস বিপ্লব হলে বহু লােক কর্মহীন হয়ে পড়বে। বিপর্যয় আসবে আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর । এদেরকে সচল রাখতে প্রয়ােজন হবে অধিক বিদ্যতের।
৩. রােবটিকস যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে প্রয়ােজন হবে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থের এবং এদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়ােজন হবে দক্ষ প্রকৌশলীর, যা একটি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
১০ বিস্ময়কর রোবট-

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url