উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ৯ টি উপায়-how to control high blood pressure immediately bangla

হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ  হচ্ছে বর্তমান সময়ের একটি কমন ব্যাধি। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ লোকের উচ্চ রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসারে আক্রান্ত। এটিকে আমরা high-pressure নামেও অভিহিত করে থাকি। হাই প্রেসার হলে আমাদের শরীরের রক্ত চাপের পরিমাণ বেড়ে যায়। এবং এই উচ্চরক্তচাপের কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এবং এই হাই ব্লাড প্রেসার মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন
আর এ কারণেই আমাদের সকলকে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সচেতন হতে হবে। কারণ এটি সম্পূর্ণ কখনো ভালো হয়ে যায় না। আমাদের স্বাভাবিক রক্তচাপ এর তুলনায় যখন রক্তচাপ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় তখন আমরা বুঝতে পারি আমাদের হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে। উচ্চরক্তচাপের পেছনে রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু বদ অভ্যাস ও কারণ। মূলত এটি দেখা দেয় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে, অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে, অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খাওয়ার ফলে। শারীরিক পরিশ্রম নিয়মিত না করলেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি অলসতা উচ্চরক্তচাপের একটি প্রধান কারণ।এর মধ্যে রয়েছে ধূমপান,মদ্যপানের  মত খারাপ অভ্যাস।এছাড়াও এটি বংশগত কারনেও হয়ে থাকে।

মূলত বর্তমান সময়ের মানুষ পরিশ্রম খুব কম করে। যার ফলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। শরীরে চর্বি জমে।  এবং এর থেকে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়।  তাই আমাদের সকলের উচিত উচ্চ রক্তচাপ রোধে সচেতন হওয়া।

হাই ব্লাড প্রেসার কেন হয়!এর লক্ষন ও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে👆

হাই প্রেসার এর অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। যে সকল লক্ষণ দেখা দিলে আপনি বুঝে নিতে পারবেন আপনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছেন। এসকল উপসর্গের মধ্যে হচ্ছে মাথা ব্যথা করা। বিশেষ করে মাথার পেছনের অংশে ব্যথা হয় এর কারণে। পেশী শক্তি কমে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, কাজে অমনোযোগী হয়ে যাওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং হাটতে গেলে মাথা ঘুরানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে এই উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার এর কারনে।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আমাদের যে সকল  কাজ করা উচিত তা হল-

১-নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা:
 বর্তমান যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের শারীরিক পরিশ্রম এর মাত্রা অনেক কমে এসেছে। শারীরিক পরিশ্রমের ফলে আমাদের দেহ সুস্থ এবং সবল থাকে। এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে শারীরিক পরিশ্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এ কারণে উচ্চ রক্তচাপ রোধ করতে হলে আমাদের অবশ্যই নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।এবং অলসতাকে বর্জন করতে হবে।

২-অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা:
 অতিরিক্ত ওজন হাইপ্রেসারের অন্যতম একটি কারণ। যাদের দেহে অতিরিক্ত ওজন তারা খুব দ্রুত হাই প্রেসারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এবং এই হাই প্রেশার তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এ কারণে অবশ্যই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। ওজন কমানোর জন্য অনেক উপায় রয়েছে। আমরা যদি এগুলো ফলো করি অবশ্যই দ্রুত ওজন কমে যাবে। এবং আপনি এই উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাবেন।

৩-সোডিয়াম কম গ্রহণ করা:
হাই প্রেসারের বড় কারন লবন

সোডিয়াম আমাদের দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এর অধিক মাত্রা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।মূলত সোডিয়াম  আমরা পেয়ে থাকি খাবার লবণ থেকে। একটি মানুষের দৈনিক সোডিয়াম গ্রহনের সর্বোচ্চ মাত্রা 3200 মাইক্রো গ্রাম। এবং পরিমিত পরিমাণ হলো ২০০০  মাইক্রো গ্রাম। কিন্তু আমরা এই ২০০০  মাইক্রো গ্রাম সোডিয়াম মাত্র 5 গ্রাম লবণ থেকে পেতে পারি। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন খাবারের সোডিয়ামের মাত্রা এর থেকে অনেক বেশি থাকে। সোডিয়াম একদিকে যেমন উচ্চ রক্তচাপের কারণ। এর পাশাপাশি এটি আমাদের কিডনির ক্ষতি করে থাকে।  প্রত্যেকটি মানুষের প্রস্রাবের সাথে ক্যালসিয়াম বের হয়। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণ এই ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। যার ফলে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার মত সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই উচ্চরক্তচাপ এবং এর সকল সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে অবশ্যই খুব কম পরিমান লবন খাওয়া উচিত। এবং খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়ার সম্পূর্ণ পরিহার করা উচিত।

৪-ক্যাফেইনযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে:
 আমরা জেনে না জেনে বিভিন্নভাবে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ করে থাকি।মূলত বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় এবং কফিতে ক্যাফেইন থাকে। যে সকল কোমল পানীয়তে ক্যাফেইন রয়েছে সেগুলো  উচ্চ রক্তচাপের ভুক্তভোগীদের পরিহার করা উচিত। এছাড়াও কফিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন রয়েছে তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কফি খাওয়া বাদ দেওয়া উচিত। এর কারণ ক্যাফেইন দ্রুত আমাদের শরীরের রক্তচাপকে বাড়িয়ে তোলে।

৫-সুস্থ এবং সুন্দর জীবন যাপন:
শারীরিক সুস্থতার পেছনেও অনেকই  কাজ করে আমাদের পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা। সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আমাদের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। অবশ্যই আলো বাতাস পূর্ণ এবং স্বাস্থ্যকর ঘরে বসবাস করা উচিত। এবং সব সময় হাসিখুশি থাকা উচিত। কখনোই দুশ্চিন্তা করা যাবে না হাই প্রেসার রোগীদের ক্ষেত্রে। কারণ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আমাদের প্রেসার কে বাড়িয়ে তোলে।

 ৬-স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

 উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই প্রতিদিন পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ফলমূল খেতে হবে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত কারণ পটাসিয়াম আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে পটাশিয়াম পেয়ে থাকি যেমন লেবু, কমলালেবু, মিষ্টি আলু ও অ্যাভোকাডো ইত্যাদি। এবং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত। তেল চর্বিযুক্ত মাছ মাংসের পরিবর্তে  পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া উচিত।

৭-নিয়মিত ব্যায়াম করা:

 সুস্বাস্থ্যের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের শরীর ডায়াবেটিসের মতো  জীবনঘাতী সমস্যাও দূর হয়। এছারাও নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।  যদিও কাজকর্ম এবং ব্যস্ততার কারণে আমরা অনেকেই ব্যায়াম করার সময় ফ্রি থাকি না। তবুও অন্ততপক্ষে নিয়মিত প্রতিদিন সকালে 30 মিনিট হাঁটা উচিত। কারণ সকালবেলা হাটলে  একদিকে যেমন আপনার শারীরিক ব্যায়াম হবে তেমনি আপনি সকালবেলা সুন্দর একটি পরিবেশকে উপভোগ করতে পারবেন। এটি আপনার মনের উপর সুন্দর একটি প্রভাব বিস্তার করবে।

৮-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ধুমপান পরিহার করুন:
ধূমপানের ক্ষতি গুলো

ধূমপান  উচ্চ রক্তচাপের প্রধান একটি কারণ। ধূমপানের সাথে আমাদের ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান চলে যায়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিকোটিন।এটি আমাদের রক্তচাপকে বাড়িয়ে তোলার  অন্যতম একটি কারণ। এছাড়াও ধূমপানের ফলে হৃদরোগ এবং ফুসফুস ক্যান্সারের মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে তাই অবশ্যই ধূমপান আমাদের সকলেরই পরিহার করা উচিত।

৯-নিয়মিত হাই ব্লাড প্রেসার পর্যবেক্ষন করা:
 যাদের হাই ব্লাড প্রেসার রয়েছে তাদের ব্লাড প্রেসার দ্রুত ওঠানামা করে। আর এই কারণে নিয়মিত প্রেসার মাপা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। আপনি চাইলে ডাক্তারের কাছে গিয়েও নিয়মিত প্রেশার পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।  উচ্চ রক্তচাপ পরিমাপের জন্য আধুনিক মেশিন রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি চাইলে ঘরে বসে খুব সুন্দর ভাবে আপনার ব্লাড প্রেসার পরিমাপ করতে পারেন এর জন্য আপনাকে কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবেনা। চাইলে আপনি টি ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিন কিনে নিতে পারেন।

 উপরুক্ত টিপসগুলো মেনে চললে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এবং নিয়মিত পরিশ্রম করলে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নেই তাদের ভবিষ্যতে উচ্চরক্তচাপে  আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url