ত্বকের যত্ন এবং রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার ও ঘিয়ের উপকারিতা

মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী। একটি সুন্দর দাগ হীণ ত্বক কে না চায়! বাংলায় একটি প্রবাদ আছে," আগে দর্শণধারী পরে  গুন বিচারী"। অর্থাৎ যে কোন কিছু যদি দেখতে ভালো না লাগে তাহলে আকর্ষণ ও কমে যায়। বিভিন্ন উপাদান দিয়ে রুপ চর্চা করা হয়। এবং এর মধ্যে অন্য তম হলো ঘি। ঘিয়ের রয়ছে বহু উপকারিতা। আর আমাদের আজকের বিষয় হলো কিভাবে ঘি এর সাহায্যে আমরা দীপ্তিময় সৌন্দর্যের অধিকারী হতে পারি তার কিছু ঘরোয়া টিপস। যেগুলো আপনিও ট্রাই করতে পারেন কোন ঝামেলা ছাড়াই!
রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার
প্রাচীন কাল থেকেই ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য রমনীরা বিভিন্ন উপায় অনুকরণ করে আসছেন।মিশরের রানী "ক্লিওপেট্রা", যাকে সর্বকালের সেরা সুন্দরী বলা হয়। তিনি তার ত্বকের লাবন্যতা ধরে রাখার জন্য দুধ দিয়ে স্নান করতেন এবং সাবান বা ক্ষার এর পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করতেন। ইংল্যান্ডের রাণী "কুইন এলিজাবেথ" তারঠোঁটের নমনীয়তা ধরে রাখার জন্য গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে ঘি ব্যবহার করতেন ।এভাবে প্রাচীন যুগ থেকে এখন পর্যন্ত আধুনিক  রমনীরা তাদের সৌন্দর্য চর্চায় ঘি ব্যবহার করে আসছে।

ঘি দিয়ে ত্বকের যত্ন কথাটি শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ত্বকের জন্য ঘি খুবই উপকারী। ঘি তে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ত্বকের ভিতর থেকে আর্দ্রতা বজায় রাখে। যার কারনে ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পরে না। চলুন দেখে নেওয়া যাক ত্বকের সতেজতা ধরে রাখতে ঘি এর জাদু।

মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ঘি এর ফেইসপ্যাক:
অনেকেই আছেন যাদের ত্বকের প্রচুর যত্ন নেওয়ার পরেও  তেমন ফল পাচ্ছেন না। তাদের জন্য ঘি ম্যাজিকের মত কাজ করবে। এক চামচ বেসন, আধা টেবিল চামচ ঘি ও সামান্য মধু মিশিয়ে একটি ফেস প্যাক তৈরি করুন।  প্যাকটি মুখে বিশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।  সপ্তাহে একদিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করুন। তফাত নিজেই বুঝতে পারবেন।

সারা বছর ঠোঁট ফাটার ঔষধ ঘি:
সারা বছর ঠোঁট ফাটছে? অনেক দামী লিপবাম, লিপজেল,  লিপওয়েল দিয়ে ও কোনো সমাধান হচ্ছে না? চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।দামী লিপ বাম ফেলে দিন। তারবদলে ঘি ব্যবহার করুন। ঘি আপনি ঠোঁটে সারা বছরই লিপবাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।  যাদের অতিরিক্ত ঠোঁট ফাটে তারা রাতে ঘুমের আগে ঘি আর চিনি মিশিয়ে একটি লিপ স্ক্রাবার তৈরি করুন। এবার ওই স্ক্রাবার টি আপনার ঠোঁটে পনের মিনিট স্ক্রাব করুন। তার পরে ঠোঁট ভালো করে ধুয়ে,  ঘি লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। টানা সপ্তাহ ব্যবহার করুন। আপনার কাঙ্খিত ঠোঁট পেয়ে যাবেন।
☑ ঠোট ফাটা রোধে করনীয়।

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার সহজ উপায়:
তৈলাক্ত ত্বকের প্রধান সমস্যা হল ব্রন বা ফুসকরি উঠা। সঠিক সময়ে সঠিক যত্ন না নিলে এগুলো পুরোমুখে ছড়িয়ে পরে।অনেক ক্ষেত্রে কালচে বা লাল দাগ হয়ে পড়ে। যারা এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন, তাদের দুঃখের দিন শেষ হতে চলেছে। ব্রন বা ফুসকরি দূরীকরণে ঘি এর চমক আপনাকে চমকে দেবে।সামান্য ঘি নিন। এবার তা চুলায় গরম করুন।  এই ঘি পুরো মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। দশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে ব্যবহার করুন এবং সকালে ভালো কোনো ফেইসবুক ওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। টানা এক মাস ব্যবহার করার পর নিজের পরিবর্তন দেখে নিজেই চমকে উঠবেন।
ঘিয়ের উপকারিতা

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার উপায়:
যারা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা, অফিসের কাজ, অতিরিক্ত চিন্তা প্রভৃতি কারনে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে থাকে। যা আপনার ত্বকের সৌন্দর্যে হানি ঘটায়। তবে তার জন্য চিন্তা নেই, ঘি দেবে এই এই কালো দাগ থেকে চিরমুক্তি। প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে সামান্য ঘি দিয়ে চোখের চার পাশে ম্যাসাজ করুন। টানা এক মাস ব্যবহার করলে এই দাগ থেকে চিরমুক্তি মিলবে।

ত্বকের দাগ দূর করতে ঘিয়ের যাদু:
ব্রন, মেছতা, রোদে পুড়ে, কোনো আঘাতে কখনো কখনো মুখে কালো দাগের সৃষ্টি হয়। এই দাগ গুলো সাধারনত খুব জেদি হয়ে থাকে। দাগ দূরীকরণের জন্য বাজারে পাওয়া ক্রিম দিয়ে সাময়িকের জন্য এই দাগ দূর হলেও , পরিবর্তীতে তা আবার দেখা দেয়। তাই এর জন্য দরকার স্থায়ী সমাধান। একটি পাত্র নিন। তাতে সামান্য ঘি, সামান্য মধু , চন্দন ও কাচা দুধ নিন। খেয়াল রাখবেন মিশ্রণ টা যেন খুব পাতলা না হয়।মিশ্রণ টি মুখ সহ পুরো ঘাড়ে প্রয়োগ করুন। বিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করুন। কিছু দিনের মধ্যেই ভালো ফলাফল দেখতে পারবেন।

নিষ্প্রাণ ত্বকের যত্নে:
ত্বক দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে? কোনো কিছু ব্যবহারেই কোন ফল আসছে না? ত্বকের জেল্লা চটজলদি ফিরে পেতে চান? বেশি কিছু না, শুধু মাত্র ঘি ব্যবহার করুন। সামান্য ঘি ও মধু মিশিয়ে নিন।এবার তা আপনার ত্বকে প্রয়োগ করুন। ত্রিশ মিনিট পর গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হারানো জেল্লা চটজলদি ফিরে আসবে। এটি স্নানের আগে ব্যবহার করুন।
☑ শ্যামলা ত্বক ফর্সা করার উপায়

ফেইসপ্যাকে ঘি এর ব্যবহার:
সামনে বিয়ে যাদের জন্য এটি বিশেষ ব্রাইডাল ফেইস প্যাক। একটি পাত্রে এক চামচ ঘি নিন। এবার এতে এক চিমটি কস্তুরী হলুদ, আধা চামচ লাল চন্দন, সামান্য মধু, সামান্য দুধ,এক চামচ বেসন, এক চামচ নিম গুঁড়া, এক চামচ গোলাপের গুড়ো এবং আধা চা চামচ তুলসী গুড়ো নিন। এবার একটি ঘন পেষ্ট বানিয়ে নিন। এবার তা মুখে ও ঘাড়ে প্রয়োগ করুন। এই প্যাকটি মুখের বলিরেখা কমাবে, ত্বক উজ্জ্বল করবে, ত্বককে ভিতর থেকে পুষ্টি জোগাবে। যাদের সামনে বিয়ে বা যেকোনো অনুষ্ঠান রয়েছে তাদের জন্য এটি চমত্কার দাওয়াই।

হাত এবং পায়ের ফাটা দূর করার উপায়:
শীতে হাত বা পা ফাটা খুবই বিরক্তিকর এবং সাধারণ একটি সমস্যা। ছেলে মেয়ে উভয়েই এই সমস্যার সমান ভুক্তভোগী। ঘি দেবে এই সমস্যার চমত্কারী সমাধান। রাতে ঘুমের আগে হাত পায়ে ভালো করে ঘি দিয়ে ম্যাসাজ করুন এবং পায়ে মোজা পরে ঘুমিয়ে পড়ুন। কিছুদিনের মধ্যেই এই সমস্যা থেকে চিরমুক্তি মিলবে।
শীতে পা ফাটার ঘরোয়া সমাধান!

পুরো শরিরের যত্নে ঘি:
মুখের সাথে সাথে শরীরের যত্ন নেওয়ার ও খুবই প্রয়োজন। প্রতিদিন স্নানের ত্রিশ মিনিট পূর্বে ঘি গরম করে পুরো শরীর এ ম্যাসাজ করুন। এরপর গোসল করে ফেলুন। ত্বকের সাথে সাথে শরীরের ত্বক ও কোমল ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

রুপ চর্চায় ঘি ব্যাবহারে যে সকল সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে-
★ ঘি দিয়ে কখনই বাইরে বের হবেন না। এতে বাইরের ধুলোবালি মুখে আটকে যাবে।
★ চেষ্টা করবেন ভালো মানের গাওয়া ঘি ব্যবহার করতে। নতুবা হিতের বিপরীত হতে পারে।

আশা করছি ঘি দিয়ে কিছু চমৎকার রেমিডি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছি। ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য এগুলো ব্যবহার করে আশা করি নিরাশ হবেন না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url