ভাবসম্প্রসারন: কালাে আর ধললা বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা

ভাবসম্প্রসারন: কালাে আর ধললা বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা।

মূলভাব : মানুষ ধনে, জ্ঞানে, মানে, ধর্মে, বর্ণে নিজেদের মধ্যে যতই বিভাজন আনুক না কেন, মানুষ হিসেবে যে প্রকৃতপক্ষে সবাই সমানি-এ সত্য কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

ভাবসম্প্রসারন লাইব্রেরি

ভাব-সম্প্রসারণ : পৃথিবীতে স্বার্থান্ধ মানুষ চিরদিন ছিল এবং থাকবে। কিন্তু তারপরও টিকে থাকবে মানবতা; মনুষ্যত্ববােধ। মানুষ মানুষের জন্য-এ সত্যটি অনেকে ভুলে যান । ধন-সম্পদের আধিক্যে, জ্ঞানে-গুণে, ক্ষমতায় অনেকে সমাজের উঁচুস্তরে অবস্থান করেন। তারা সমাজের নীতি নির্ধারক, বিধানদাতা এবং কর্তা। সেই দম্ভে তারা অনেক সময় অন্ধ হয়ে অসহায়, দুর্বল ও অপেক্ষাকৃত নীচুতলার মানুষদের মানুষ হিসেবেই মূল্যায়ন করতে চান। তারা তাদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য সমাজে নানাভাবে শ্রেণি বিভাজন সৃষ্টি করে রাখেন। যেমন : ধর্মের দোহাই দিয়ে হিন্দু-ব্রাহ্মণ পুরােহিতরা বর্ণভেদ প্রথা টিকিয়ে রেখেছে। মুসলমানদের মধ্যে মৌলভি-মুনশিরা তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে আশরাফ - আতরাফ শ্রেণিবিভাজন করে রেখেছে। আবার দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, ক্ষমতার দম্ভে একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত হয়েও আমরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে বসে আছি- হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ কিংবা ইংরেজ, বাঙালি, হিন্দুস্তানি, পাকিতানি ইত্যাদি হিসেবে। কিন্তু আমরা নিজেদের যতভাবে, যত কারণে, যত প্রকারেই বিভক্ত করি না কেন, মানুষ হিসেবে যে আমরা সবাই সমান—এ সত্য মুছে ফেলার কোনাে উপায় নেই। কারণ আমরা সবাই একই পৃথিবীর মানুষ; একই ভাবে আমাদের জন্ম-মৃত্যু । আমরা একই পৃথিবীর স্নেহ-সান্নিধ্যে লালিত-পালিত ।

মূলভাব : মানুষ ধনে, জ্ঞানে, মানে, ধর্মে, বর্ণে নিজেদের মধ্যে যতই বিভাজন আনুক না কেন, মানুষ হিসেবে যে প্রকৃতপক্ষে সবাই সমানি-এ সত্য কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমাদের আকৃতি-প্রকৃতি, রং-চেহারা যতই ভিন্ন হােক; আমরা যতই নিজেদের উকৃষ্ট, নিকৃষ্ট, সভ্য-অসভ্য, নিগ্রো, ফর্সা, শ্যামলা বলে বিভাজিত করি না কেন আমাদের ভেতরে যে রক্ত প্রবাহিত, তা সবার একই রকম। আঘাত পেলে আমরা সবাই কষ্ট পাই, সুখ পেলে আমরা সবাই আনন্দিত হই। আমাদের চিরন্তন আবেগ-অনুভূতি সবার একই রকম। তাই কবি বলেছেন-

নাই দেশ-কালপাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,

সব দেশে সবকালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

(কাজী নজরুল ইসলাম)


মন্তব্য: সুতরাং মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ তা আসলে অনর্থক। প্রকৃতপক্ষে মানুষ হিসেবে সবাই সমান। আর সে জন্যই বলা হয়েছে যে, কালাে আর ধলাে বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা।' কথাটি সম্পূর্ণ সত্য ও অনুধাবনযােগ্য। এ সত্যটি বুঝতে পারলে আমাদের আর কোনাে সমস্যাই থাকে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url