কম্পিউটার সফটওয়্যারের ক্রমবিকাশ - Development of computer software

কম্পিউটার সফটওয়্যারের ক্রমবিকাশ: প্রথম দিকের কম্পিউটার মানে ছিল হার্ডওয়্যারের সাথে প্রাপ্ত সফটওয়্যার দিয়ে কাজ করা। কাজটি কঠিন ছিল। কারণ কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি মডেলের কম্পিউটারের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে সফটওয়্যার তৈরি করতে হত। কম্পিউটার ব্যবহার এজন্য সীমিত ছিল যে ব্যবহারকারীকেই তার প্রয়ােজনীয় সফটওয়্যার তৈরি করতে হত।

সফটওয়্যার ক্রমবিকাশ
ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে সফটওয়্যার কোম্পানি গুলাের জন্ম হতে থাকে। তবে ১৯৬৫ থেকে ৮৫ সালের মাঝে সফটওয়্যার তৈরি করার বিষয়টি ছিল জটিল ও সমস্যা জর্জরিত। এই সময়ে সফটওয়্যার প্রকল্পসমূহ বাজেট ঘাটতি,সময়সীমা অতিক্রম ও সম্পদহানির সমস্যায় পড়ে। এমনকি কোনাে কোনাে প্রকল্পে জীবনহানি ঘটে।

ওএস ৩৬০ ছিল এমন একটি সফটওয়্যার প্রকল্প যার সূচনা হয় ষাটের দশকে। এতে এক হাজার প্রােগ্রামার কাজ করে। সফটওয়্যারের নিরাপত্তার অভাব তখন ব্যাপক ছিল। রেডিও থেরাপির সফটওয়্যারে ত্রুটির জন্য জীবনহানি ঘটার দৃষ্টান্তও রয়েছে।

কম্পিউটারের বিকাশের প্রথম যুগে পুরুষরা সফট ওয়্যারের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করত না। হার্ডওয়্যার ছিল তাদের প্রধান বিষয়। মেয়েদেরকে তখন ধৈর্যের সাথে কোড লেখার কাজে ব্যস্ত রাখা হত ১৯৮৫ থেকে সফটওয়্যারের জন্য পরিকল্পনা, সরঞ্জাম, পেশাদারিত্ব গড়ে উঠতে থাকে।

প্রথম যুগের সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের মাঝে রয়েছেন Edsqer w. Dijkstra, Ken Thompson (ইউনিক্সের উদ্ভাবক) Dennis Ritchie (সি-এর উদ্ভাবক) Brian Kernirghan (সি-এর সহ গ্রন্থকার) Bill joy (সান ও,এস এর উদ্ভাবক), Anders Hejlsberg (টার্বো পাসকেলের উদ্ভাবক) John Voj Neuman (অপারেটিং সিস্টেম ধারণার উদ্ভাবক) John Backus (Fortan ভাষার উদ্ভাবক) Bjarne Stroustrup (সি ++ এর উদ্ভাবক) Alan Kay, James Gosling (জাভার উদ্ভাবক) Alan Cooper (ভিজুয়াল বেসিক-এর উদ্ভাবক).

Software শব্দটি ১৯৫৮ সালে প্রথম ব্যবহার করেন John W Tukey. কার্যত পঞ্চাশের দশকে সফটওয়্যার শিল্পের সূচনা হয়। প্রথম সফটওয়্যার কোম্পানি কম্পিউটার ইউপেজ কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে । Elmer Kubie এবং John W. Sheldon নামের আইবিএম-এর দুজন সাবেক কর্মচারী এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন।

কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার!

এর আগে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের নির্মাতা ও ব্যবহারকারীর সফটওয়্যার তৈরি করতেন। ১৯৫৯ সালে এ্যাপ্লাইড ডাটা রিসার্চ নামের কোম্পানি স্থাপিত হয়। ১৯৬০ সালের পর থেকে সফটওয়্যারের চাহিদা বেশ জোরালােভাবে বাড়তে থাকে। তখনও কম্পিউটারের সাথে অপারেটিং সিস্টেম, কম্পাইলার ও ইউটিলিটি সফটওয়্যার সরবরাহ করা হত । এসব পাওয়া যেত বিনামূল্যে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে সফটওয়্যার কোম্পানির টিকে থাকা কঠিন ছিল । তবুও দিনে দিনে বাণিজ্যিক সফটওয়্যার কোম্পানির জন্ম হতে থাকে। আইবিএম ১লা জানুয়ারি ১৯৭০ থেকে বিনামূল্যে সফটওয়্যার সরবরাহ বন্ধ করে।

শুরুতে কম্পিউটারের প্রােগ্রাম ও উপাত্ত পাঞ্চ কার্ডে প্রস্তুতকারকরা সরবরাহ করত। পরে কম্পিউটারের সাথে লাইব্রেরী সরবরাহ করা হত। এক সময়ে runtime লাইব্রেরী সরবারাহ করা হত। একে অপারেটিং সিস্টেমের প্রথম ধাপ বলা যায়। মনে করা হয় যে ১৯৫৬ সালে ব্যবহৃত GM-NAA_1/0 হচ্ছে প্রথম অপারেটিং সিস্টেম। এটি প্রস্তুত করেছিল জেনারেল সটস।

তবে, তখনকার প্রতিষ্ঠিত কম্পিউটার নির্মাতা আইবিএম তাদের পূর্ণাঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম ওএস-৩৬০ তৈরিতে বেশি মনযােগী হয়। এই সময়ে অন্যান্য নির্মাতারাও অনেক গুলাে অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে। ষাটের দশকের শেষে জন্ম হয় ইউনিক্স-এর, এরপর VMS এবং তারও পরে হােম পিসির জন্য জন্ম নেয় CP/M ও GEOS. CP/M-80 বহুল প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমে ছিল। এরপর ৮১ সালে PC-DOS বা MS DOS জন্ম নেয়।

জেরক্সের Alto Computer System -এর জন্মের আগের সকল অপারেটিং সিস্টেমই ছিল Textbased। এটিই অপারেটিং সিস্টেমকে Graphics based অপারেটিং সিস্টেমের জগতে উত্তরণ ঘটায়। ১৯৬২ সালে বাজারে ছাড়া spacewar-ই সম্ভবত প্রথম কম্পিউটার গেম। ১৯৬০ সালে তৈরি করা ‘Eye' ১৯৬৬ সালে উদ্ভাবিত Eliza ইত্যাদি এ্যাপ্লিকেশন প্রােগ্রাম কম্পিউটারকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়ােগের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে।

১৯৭৮ সালে বাজারে ছাড়া Visical পিসির দুনিয়ার প্রথম যুগান্তকারী এ্যাপ্লিকেশন প্রােগ্রাম। ১৯৮২ সালে জন্ম নেয়া Word perfect যা কম্পিউটারকে লেখালেখির কাজে জনপ্রিয় করে । পরবর্তীতে ওয়ার্ড, এক্সেল, পেজমেকার, পাওয়ার পয়েন্ট, ফটোশপ, প্রিমিয়ার ইত্যাদি Aplication Program.

দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের ব্যবহারকে ব্যাপকতর করে। কম্পিউটারের গেমসগুলাে ছাড়াও ইন্টারনেট ও নেটভিত্তিক এ্যাপ্লিকেশন প্রােগাম কম্পিউটারকে অতি প্রয়ােজনীয় সামগ্রীতে পরিণত করেছে।

বাংলাদেশের প্রথম জমানার সফটওয়্যার গুলাের মাঝে আছে সুইডিশ কোম্পানি ভলভাের জন্য তৈরি করা সফটওয়্যার, আবহ, বর্ণ, বিজয়, প্রশিকা, ব্যাক্সি ব্যাংক, পিসি ব্যাংক ইত্যাদি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url