ক্রিপ্টোকারেন্সি কয়েন এবং টোকেন কি, এদের মধ্যে পার্থক্য এবং ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে কোনটি কম ঝুকিপূর্ণ

আমরা অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি নাম শুনেছি! ক্রিপ্টোকারেন্সি কি (What Is Cryptocurrency)? ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে ভার্চুয়াল মুদ্রা (Cryptocurrency is a virtual currency)। যা ব্লকচেইন প্রযুক্তি তে লেনদেন হয়ে থাকে এবং যার কোনো বাস্তব রূপ নেই! তবে আমরা যারা এই ক্রিপ্টোকারেন্সি সাথে সংযুক্ত তারা কয়েন (Coin) এবং টোকেন(Token) এর সাথে পরিচিত।

ক্রিপ্টো কয়েন ও টোকেন কি ও এর পার্থক্য
তবে আমরা অনেকেই জানি না কয়েন এবং টোকেন আসলে কি (What are cryptocurrency coins and tokens) । এবং কি কারনে আমরা কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি-কে কয়েন আবার কোন কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি-কে টোকেন বলে থাকি। আসুন তাহলে সহজ ভাবে জেনে নেওয়া যাক কয়েন এবং টোকেন কি, বলার কারণ এবং কয়েন এবং টোকেন এর মধ্যে পার্থক্য কি। এবং কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি কে কিভাবে বুঝবো এটা কয়েন নাকি টোকেন!

আমরা যারা ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) সম্পর্কে জানি তারা বিভিন্ন সময় শুনে থাকি বিটকয়েন (Bitcoin), ইথেরিয়াম (ethereum) লাইট কয়েন (lite coin) ডজ কয়েন (Doge Coin) টিআরএক্স (Trx), এক্সএলএম (Xlm), বিএনবি (BNB) ইত্যাদি আরো হাজারো ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম। কিন্তু এখানে প্রশ্ন ওঠে কোনটিকে আমরা কয়েন বলব আবার কোনোটিকে টোকেন বলবো!

আমরা সকলেই জানি ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হয়ে থাকে ব্লকচেইন টেকনোলজি ( blockchain Technology) -এর মাধ্যমে! ব্লকচেইন টেকনোলজিতে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (Smart Contrct) ব্যবহার করার মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সির সকল কাজসমূহ এবং লেনদেন সম্পন্ন হয়ে থাকে।

☞ ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি? এবং এটি কিভাবে কাজ করে!

যেসকল ক্রিপ্টোকারেন্সির নিজস্ব স্মার্ট কন্ট্রাক্ট রয়েছে সেগুলোকে কয়েন (Coin) বলা হয়। অর্থাৎ কয়েন এর সম্পূর্ণ কাজ হয় নিজস্ব স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (smart contract) এর মাধ্যমে। তাহলে সহজ ভাবে বলা যায় যে সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি নিজস্ব ব্লকচেইন ব্যবহারের মাধ্যমে লেনদেন এবং তার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে এবং অন্য কোন ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক বা স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এর সাহায্য গ্রহণ করে না তাকে কয়েন বলা হয়।

কিভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কয়েন তৈরি হয়? আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানলাম  যে সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি নিজস্ব স্মার্ট কন্ট্রাক্ট বা ব্লকচেইন  নেটওয়ার্কের (blockchain network) মাধ্যমে তার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে তাকে বলা হয় কয়েন। তাহলে এই কয়েন কিভাবে তৈরি করা হয় (How cryptocurrency coins are made)? কয়েন তৈরি করতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের যেটি প্রয়োজন পড়বে তা হচ্ছে নিজস্ব স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (smart contract) যার মাধ্যমে কয়েন এর যাবতীয় লেনদেন এবং অন্যান্য সকল কাজ সম্পন্ন হবে। এর পরে কয়েন তৈরি মার্কেটে ছেড়ে দেওয়া। ব্যাবহারকারী খোজা সহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে একটি কয়েন বিস্তৃতি পায়।

একটি ব্লকচেইন স্মার্ট কন্ট্রাক তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এবং প্রচুর পরিমাণে দক্ষ ডেভলপারের প্রয়োজন পড়ে একটি কয়েন তৈরি করতে। এছাড়াও স্মার্ট কন্ট্রাক্ট বা ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে যেমন প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় এবং ডেভলপারের প্রয়োজন পড়ে তেমনি এটিকে সচল রাখতে দরকার পড়ে প্রচুর পরিমান মাইনার। যারা এই স্মার্ট কন্ট্রাক এর লেনদেন গুলোকে সম্পন্ন করবে।

এবং প্রতিটি কয়েন এর জন্য রয়েছে নিজস্ব ওয়ালেট থাকে যেখানে ওই ক্রিপ্টোকারেন্সি সংরক্ষণ এবং লেনদেন সহ যাবতীয় কাজ করা যাবে।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা কয়েন সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেছি। এবার আসুন ক্রিপ্টোকারেন্সি টোকেন (Crypto Token) সম্পর্কে জেনে নেই।

ক্রিপ্টোকারেন্সি টোকেন কি (what is cryptocurrency token) ? আমরা উপরের আলোচনা থেকে জেনেছি যে সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি নিজস্ব ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক বা স্মার্ট কন্ট্রাক রয়েছে তাকে কয়েন বলা হয়। আবার এই স্মার্ট কন্ট্রাক বা ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আরো নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করা সম্ভব। যারা ওই কয়েনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে লেনদেন সহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবে। এ কারণে তাদের নিজস্ব কোন স্মার্ট কন্ট্রাক্ট বা ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে না। এবং যে কেউ চাইলেই যত ইচ্ছা টোকেন তৈরি করতে পারে। একটি টোকেন তৈরি করা 5-10 মিনিটের ব্যাপার। যেখানে একটি কয়েন তৈরি করতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়।

ক্রিপ্টো ট্রেডিং (Crypto Treading) কি এবং ট্রেডিং থেকে কিভাবে লাভবান হবেন ও জনপ্রিয় কিছু ট্রেডিং প্লাটফর্ম! 

তাহলে সহজ ভাবে টোকেন বলতে আমরা বুঝি, যেসকল ক্রিপ্টোকারেন্সি নিজস্ব স্মার্ট কন্ট্রাক্ট  বা ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক নেই। যারা অন্য কয়েনের স্মার্ট কন্ট্রাক বা ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক এর উপর ভিত্তি করে যাবতীয় লেনদেনসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে তাকে টোকেন বলা হয়। এবং লেনদেনের জন্য তাদের আলাদা কোন ওয়ালেট থাকে না। তারা মূল নেটওয়ার্কের ওয়ালেট এবং এড্রেস ব্যবহার করার মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে তাকে টোকেন বলা হয়।

চলুন নিচে  কয়েন এর এবং টোকেন এর মধ্যে যেসকল পার্থক্য আছে সেগুলো জেনে নেই-

কয়েন

টোকেন

প্রতিটি কয়েনের নিজস্ব স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এবং ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক আছে। যা ব্যাবহার করে কয়েন এর যাবতীয় লেনদেন এবং অন্যান্য কাজ করা হয়।

টোকেন এর নিজস্ব কোন স্মার্ট কন্ট্রাক্ট বা ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক নেই। টোকেন মূল কয়েন এর ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে লেনদেন এবং অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে।

প্রতিটি কয়েন এর নিজস্ব ওয়ালেট রয়েছে কয়েন গুলো সংরক্ষন এবং লেনদেনের জন্য।

টোকেনের কোন নিজস্ব ওয়ালেট নেই। এটি মূল কয়েনের ওয়ালেট ব্যবহার করে লেনদেন, জমা রাখা সহ যাবতীয় কাজ করে।

একটি কয়েন তৈরি করা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ব্যাপার। কারণ কয়েন তৈরি করতে হয় সম্পূর্ণ বেইজ থেকে।

টোকেন তৈরি করা খুবই সহজ ব্যাপার। চাইলে আপনিও একটি টোকেন তৈরি করতে পারেন মাত্র 5 থেকে 10 মিনিটের মধ্যে। কারণ টোকেন তৈরিতে কোন স্মার্ট কন্ট্রাক্ট বা ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক তৈরির ঝামেলা থাকে না।

একটি কয়েন এর নিয়ন্ত্রণ কোন একক ব্যক্তির হাতে থাকে না। 

টোকেন এর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ ঔ টোকেনের ডেভলপারের হাতে থাকে।

কোন কয়েন চাইলেই নতুন করে প্রচুর পরিমান কয়েন তৈরি করা বা মার্কেটে ছাড়া সম্ভব না। নির্দিষ্ট কিছু প্রসেস মেনে কয়েন গুলোর পরিমান বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে। 

টোকন শুধুমাত্র একবার ইসু করা যায়। ডেভলপার টোকেন তৈরীর সময় যতো ইচ্ছে ততো টোকেন তৈরি করতে পারে। এবং ওই দোকানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ডেভলপারের হাতে থাকে তাই মার্কেট আপ/ ডাউন করা ডেভলপার চাইলেই পারে।

ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে টোকেন অপেক্ষা কয়েন কম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কোন ব্যক্তি চাইলেই কয়েনের মার্কেট আপ/ডাউন করতে পারে না।

টোকেনের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু সম্পূর্ণ ডেভলপারের হাতে তাই চাইলেই মার্কেট আপ/ ডাউন করে দিয়ে মার্কেটের অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। তাই ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।


ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে কোনটি বেশি সুবিধাজনক এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ:
ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে কয়েন অপেক্ষা টোকেন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এর কারণ আমরা আগেই জেনেছি যেহেতু কয়েনের মার্কেট নিয়ন্ত্রণ কোন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে না তাই এর দাম রাস্তা বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া অনেক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। অপরদিকে টোকেন যেহেতু ডেভলপারের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে তাই চাইলেই ডেভলপার তার দোকানের মূল্য হ্রাস করতে পারে বা স্ক্যাম করতে পারে। এ কারণে যারা ক্রিপ্টো ট্রেডিং করেন তাদের উচিত বুঝে শুনে টোকেন এ বিনিয়োগ করা।
Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ৯ জুন, ২০২৩ এ ১০:৫৭ PM

    Thanks

Add Comment
comment url