ট্রেডিং ব্যবসা কি? ক্রিপ্টো ট্রেডিং কিভাবে করবে ও যেসব ভুলে সর্বনাশ হতে পারে!

আমরা অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) বলতে বিটকয়েন (Bitcoin)-কেই বুঝি! তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কিন্তু শুধু বিটকয়েন নয়! আরো হাজারো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে এই ডিজিটাল মুদ্রা জগতে। যেমন - ইথেরিয়াম, বিএনবি, এক্সআরপি, লাইটকয়েন ইত্যাদি!  আবার এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা দুই ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো হলো কয়েন এবং টোকেন! আর এই ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল ট্রেডিং প্লাটফর্ম।

ট্রেডিং ব্যবসা কি
ক্রিপ্টো ট্রেডিং ব্যাবসা কি? ও ক্রিপ্টো ট্রেডার কাকে বলে: ক্রিপ্টো কারেন্সি ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসাকে ক্রিপ্টো ট্রেডিং ব্যবসা বলে। অর্থাৎ কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি কম দামে থাকা অবস্থায় ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় হচ্ছে ক্রিপ্টো ট্রেডিং ব্যবসা। আর যারা এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডের সাথে জড়িত তাদের ক্রিপ্টো ট্রেডার (Crypto Treader) বলে। মুলত ট্রেড শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ব্যবসা বা বানিজ্য! 

আর এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে আপনি রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যেতে পারেন খুব সহজেই! কারন ক্রিপ্টোকারেন্সি এমন একটা জগৎ যেখানে আপনি আজকে কোন কয়েন বা টোকেন ক্রয় করলে একদিন দুইদিন বা এক সপ্তার মাথায় সেটি থেকে ৫০ গুন ১০০ গুণ পর্যন্তও লাভ করতে পারেন!

ব্যাপার টা খুব ইন্টারেস্টিং তাইনা? হ্যা আসলেই যেখানে ব্যাবসা বা অর্থ ব্যাংকে রাখলে দ্বিগুন অর্থ পেতে কয়েক বছর লেগে যায় সেখানে ক্রিপ্টো ট্রেডিং জগতে মুহুর্তের মধ্য কয়েক গুন লাভ হয়ে যেতে পারে।


ক্রিপ্টো ট্রেডিং কি? এবং কিভাবে ট্রেডিং করে হাজার হাজার ডলার আয় করবেন!


আর এই লাভের কারনেই অনেকেই ঝুঁকছেন এই ক্রিপ্টো ট্রেডিং পেশায়। আমি বিগত ১ বছর ধরে এই পেশার সাথে যুক্ত হয়েছি তবে এই সেক্টরে নিজেকে প্রোফেশনাল দাবি করার ক্ষমতা আমি অর্জন করতে পারিনি। তারপরেও মোটামুটি স্বল্প পরিমান বিনিয়োগ এ বেশ ভালোই অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছি এই প্লাটফর্মে এসে। যাই হোক আমি এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০ গুন এর অধিক লাভ করেছি মাত্র ১ সপ্তাহের ভিতরে এমন রেকর্ড ও আছে। তবে যেহেতু আমি পাশাপাশি ব্লগিং এর সাথে যুক্ত আছি তাই আপনাদের সাথে আমার অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করতে চাই এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং এ যেসব ভুল আমাদের জিবনে সর্বনাশ করতে পারে সেসব বিষয় বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু লিখতে বসলাম।

আর আপনার যারা আমার ব্লগের নিয়মিত পাঠক তারা অবশ্যই জানেন কোন বিষয়ে সহজ এবং সঠিক তথ্য উপস্থাপন করাই আমার পেশা।  আমার লেখা আর্টিকেল গুলো কখনোই অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করিনা! আশাকরি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন আর্টিকেল টি!


প্রথমেই বলতে চাই এই ক্রিপ্টো ট্রেডিং জগৎটা একটা আফসোস এর জগৎ! এখানে আপনি লাভ করেও আফসোস করবেন এবং লস করলেও আফসোস করবেন! আমরা লস করলে কেন আফসোস করি তা সকলেই বুঝতে পারলেও আপনাদের মধ্যে একটা প্রশ্ন জেগেছে যে, লাভ হলেও আমার কেন আফসোস করবো তাইনা? চলুন বিশ্লেষণ করা যাক!

ধরুন আপনি একটি কয়েন ক্রয় করছেন ১ ডলারে যদি দাম কমে যায় তাহলে তো আফসোস করলেন স্বাভাবিক নিয়মেই। কিন্তু ধরুন কয়েনটা ১ ডলারে কিনছেন সেটি এখন ২ ডলার! আপনি কি করবেন বেচে দিবেন? নিশ্চয়ই!  কারন আপনার এখানে ১০০% লাভ হলো। কিন্তু দেখা গেল কয়েনটা ২ ডলার ছাড়িয়ে ৪ ডলারে পৌঁছে গিয়েছে! কিন্তু আপনি ২ ডলারেই বেচে দিয়েছিলেন! কি আফসোস হচ্ছে তো? নিশ্চই হবার কথা! কারন তখন না বিক্রি করলে আপনার আরো ডাবল লাভ হতো!

তাহলে কি করবেন দাম বৃদ্ধি পেলেও রেখে দিবেন আরো দাম বৃদ্ধির আশায়?  কিন্তু রেখে দিয়ে দেখলেন হটাৎ করে দাম কমে ০.৯ ডলারে এসে ঠেকলো দাম৷ আপনার তো পুরো মাথায় হাত! লাভ পেয়েও হাতছাড়া! কি একটা মুশকিল ভাবুন তো! এখন লাভের বিপরীতে লোকসান দুঃখে বুক ফেটে যাচ্ছে! 

তাহলে আমাদের করনীয় কি? অবশ্যই কয়েনটি কেনার আগে ধারনা করতে হবে কি পরিমাণ প্রফিট গেইন করবেন এই কয়েন থেকে। আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছালেই সেল করুন। লাভ নিয়ে পকেটে চিল করুন ব্যস! আপনি লাভ পেয়েছেন তাতেই খুশি হোন! তার পর যা হোক তা নিয়ে ভাবা বাদ দিন। তবে আপনি কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করার পরেও আশা আছে আরো লাভ হবে তাহলে অন্তত আপনার মুলধন সরিয়ে নিন এবং লাভের অংশ দিয়ে রিস্ক নিন। তবেই আপনি লাভবান হবেন!


ক্রিপ্টো ট্রেডিং এ বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে? 

ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক পেশা। তবে এখানে যেমন প্রচুর পরিমাণে লাভ করা সম্ভব তেমনি লোকসানের ঝুঁকিও প্রচুর পরিমাণে। এবং লাভ বা ক্ষতি কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবে না। আর এ কারণেই ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করায় আমাদের কিছু দিকে খেয়াল রাখা উচিত। কখনোই ক্রিপ্টো কারেন্সি ট্রেডিং (Cryptocurrency Treading) এর উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। অন্য ব্যবসা বা কাজের পাশাপাশি আপনি পার্ট টাইম হিসেবে ক্রিপ্টো ট্রেডিং কে বেছে নিতে পারেন।

এবং যে অর্থ বিনিয়োগ করলে লোকসান গেল আপনার বাস্তব জীবনে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না সেই অর্থ ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা উচিত। এর কারণ হচ্ছে আপনি যদি আপনার ভবিষ্যতের পুঁজি বা ঋণের টাকা এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেন তাহলে বড় কোন লোকসানের সম্মুখীন হলে আপনি একেবারে সর্বহারা হয়ে পরবেন।

এরপরে কখনোই এক কয়েন এ সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত নয় কারণ তাতে লস হয়ে গেলে আপনি বড় লোকসানে পড়ে যাবে। এ কারণে একাধিক কয়েনে বিনিয়োগ করার ফলে আপনার দু-একটি কয়েনের লোকসান হলেও বাকি গুলোতে লাভ হওয়ার ফলে আপনার মূলধনের ওপর প্রভাব পড়বে না এবং লাভ থাকবে।

এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সি কয়েন এবং টোকেন দুই ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি হয়ে থাকে এক্ষেত্রে টোকেনে কখনোই অধিক বিনিয়োগ করা উচিত নয় কারণ যেকোন সময় টোকেন স্ক্যাম করতে পারে বা ভ্যালু কমে যেতে পারে। কারন টোকেন তার এডমিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং বহু পরিমান টোকেন এডমিন এর নিকট সংরক্ষিত থাকে যার দ্বারা যে কোন সময় এর মুল্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে টোকেন এর এডমিন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি কয়েন এবং টোকেন কি (what is cryptocurrency coin and token) ? কোনটি কয়েন বা কোনটি টোকেন কিভাবে চিনবো!

এ কারণে আমি আপনাদের পরামর্শ দিব কেউ ভালোভাবে জেনে এবং বুঝে তারপরে এই ট্রেডিং সেক্টরের যুক্ত হন। স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় আপনার সর্বস্ব বিনিয়োগ করে আর্থিক ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন না। কারণ না জেনে বুঝে এই সেক্টরের বিনিয়োগ করলে আপনি লাভের চাইতে লোকসানে পরার বেশি ঝুকি বহন করবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url