ক্যাশলেস সোসাইটি কি? এর সুবিধা অসুবিধা - What is cashless society (Advantage And Disadvantage)

বর্তমান সময়ে ক্যাশলেস সোসাইটি (cashless society) নামক একটি ধারণা বহুল প্রচলিত হয়ে উঠছে! এবং সেই সাথে সাথে ডিজিটাল মুদ্রা এবং পেমেন্ট ব্যবস্থা ও বহুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাহলে কি খুব শীঘ্রই ক্যাশ টাকার ব্যবহার শেষ হয়ে যাচ্ছে? বৈশ্বিক লেনদেন ব্যবস্থায় এক নতুন বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে? চলুন আজকের নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব ক্যারলেস সোসাইটি (Cashless society article) এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা (digital payment gateway) সম্পর্কে! এছাড়াও ক্যাশলেস সোসাইটির সুবিধা অসুবিধা এবং কিভাবে এই চিন্তা ধারাকে বাস্তবায়ন করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।

What is cashless society
ক্যাশলেস সোসাইটি কি (What is cashless society)? "ক্যাশলেস সোসাইটি হচ্ছে এমন একটি ধারনা যেখানে ক্যাশ টাকা বা নগদ টাকার কোন ব্যবহার থাকবে না।" সবকিছু লেনদেন হবে ডিজিটাল উপায়ে! যার ফলে নগদ অর্থের ব্যবহারের পাশাপাশি নগদ অর্থ ব্যবহারের ঝুঁকিও বহুলাংশে কমে যাবে।

বিগত কয়েক বছর আগেও আমরা লেনদেন বলতে বুঝতাম কোন কিছু কেনাকাটা করতে হলে পকেটে নগদ টাকা নিয়ে যেতে হবে। এবং নগদ টাকার বিনিময়ে তা ক্রয় করতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে এই চিত্র অনেকাংশে পরিবর্তিত হয়ে একটি নতুন রূপ ধারণ করেছে। যেখানে বর্তমান সময়ে পকেটে নগদ টাকা বহন না করেও বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করা সম্ভব। অর্থাৎ ডিজিটাল পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করেই এখন কেনাকাটা করা সম্ভব।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যদিও এখানে সরকারের বিপরীতে বিভিন্ন কোম্পানি বেশি কাজ করে যাচ্ছে। যেমন ব্যাংক ব্যবস্থায় লেনদেনের জন্য রয়েছে ডেবিট কার্ড (Debit card), ক্রেডিট কার্ড (Credit card) এবং মাস্টার কার্ড (MasterCard)। যেখানে সরাসরি নগদ অর্থের বিপরীতে এই কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন (Cashless transaction) সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। যেখানে লেনদেন করতে আপনাকে কোন প্রকার কার্ড বা নগদ অর্থের দরকার নেই শুধুমাত্র একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে আপনি যাবতীয় লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন। যদিও আমরা লক্ষ্য করে দেখলে এখানে আরেকটি বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা লক্ষ্য করতে পারি। সেটি হল একটি কার্ডলেস পেমেন্ট ব্যাবস্থা (Cardless society)।


ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড এবং মাস্টার কার্ডের সুবিধা প্রদান করে থাকে বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। যেখানে তারা ব্যাংক গ্রাহককে একটি কার্ড প্রোভাইড করে। এবং গ্রাহক সেই কার্ডের মাধ্যমে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের দ্বারা সমস্ত লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। অপরদিকে বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সুবিধা দিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। যেমন এমাজন (Amazon pay), গুগল পে (Google Pay), হোয়াটসঅ্যাপ পে (WhatsApp Pay) ইত্যাদি ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন দেশীয় মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা। যেমন আমাদের দেশে রয়েছে বিকাশ, নগদ, রকেট মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশ, সেলফিন ইত্যাদি।

ক্যাশলেস নির্মাণে আমাদের দেশেও বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ যেখানে ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর বেশি একটা নির্ভরশীল নয় সেখানে তারা মোবাইল ব্যাংকিং এর উপর ঝুঁকেছে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে ১১ কোটির অধিক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সুবিধা ভোগ করছে। এবং শহরের পাশাপাশি গ্রামের লোকেদের কাছেও এই মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা বেশ জনপ্রিয়।

এছাড়াও এই ক্যাশলেস সোসাইটি বিনির্মাণে ক্রিপ্টোকারেন্সি (cryptocurrency) বা ব্লক চেইন টেকনোলজি (Blockchain Technology)  এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যেখানে লেনদেন করা আরো সহজ এবং বেশি সুরক্ষিত। তবে ক্রিপ্টো কারেন্সির একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে এর ভ্যালু নির্ধারণ করা এ কারণে পেমেন্ট মেথড হিসেবে ক্রিপ্টো কারেন্সির ব্যবহার বেশ জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

ডিজিটাল মুদ্রা বা কারেন্সি কি? (what is cryptocurrency) 

ক্যাশলে সোসাইটি এবং ডিজিটাল পেমেন্ট মেথড সম্পর্কে আমরা বেশ কিছু জানলাম। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় এই ডিজিটাল প্রেমেন্ট মেথড কি ( What is Digital payment gateway)? ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম যেখানে নগদ টাকার পরিবর্তে ইলেকট্রোনিক মানি পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে একজনের ডিভাইস হতে অন্যজনের ডিভাইসে স্থানান্তরিত হবে। এবং সেই ডিভাইস থেকে আবার অন্য ডিভাইসে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

নগদ টাকা থেকে ডিজিটাল পেমেন্ট কেন ভালো (Why digital payment is better than cash/Benefits of cashless society)? নগদ টাকা থেকে ডিজিটাল লেনদেন এর বহুবিধ সুবিধার দিক রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নগদ অর্থ পরিবহনে আমরা যেসকল অসুবিধা ও ঝুঁকির সম্মুখীন হই সেগুলো থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। যেমন চুরি, ছিনতাই, পকেটমার ইত্যাদির হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব! দূরে কোথাও একসাথে অনেক টাকা পরিবহন করা যেমন ঝামেলাদায়ক তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খুব সহজে এই অর্থ পরিবহন করা সম্ভব।

এছাড়াও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে যেমন ডিজিটাল লেনদেন চালু হলে সরকারের প্রতিবছর নতুন টাকা ছাপাতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তা হবে না। বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু এই টাকার মাধ্যমে একে অপরের সংস্পর্শে আসে। যা ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। উদাহরণ স্বরূপ আমরা করোনা মহামারির সময়ের কথাই চিন্তা করতে পারি। টাকা পয়সার মাধ্যমে করোণা ছড়ায় এই কারণে সরকার থেকেও ডিজিটাল লেনদেনে জনগণকে আগ্রহী করা হয়েছিল।

ক্যাশলেস লেনদেনের উপর মানুষ আগ্রহী হলেও কোন দেশে এখনো পুরোপুরি ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়নি।  তাহলে কিভাবে এই ক্যাশলেস সোসাইটি গঠন করা যায় (How to build a cashless society) চলুন আলোচনা করা যাক। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা নগদাকা নির্ভর তাই চাইলেই হঠাৎ করে নগদ টাকার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ক্যাশলেস সোসাইটি বা নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনতে ডিজিটাল লেনদেনের প্রতি মানুষকে আগ্রহী এবং অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।

আমরা যারা বাংলাদেশে থাকি এবং অনলাইনে বিভিন্ন শপিং করে থাকি সেখানে দেখা যায় বিকাশে পেমেন্ট করলে ১০ পার্সেন্ট ক্যাশব্যাক। বা নগদে পেমেন্ট করলে ১০% ক্যাশব্যাক এমন অফার দেওয়া থাকে। এটি করার শুধুমাত্র একটাই উদ্দেশ্য যে মানুষকে নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনে আগ্রহী করা। এর ফলে একদিকে যেমন মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করতে আগ্রহী হচ্ছে তেমনি নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনের প্রতি আগ্রহী এবং অভ্যস্ত হয়ে পড়তেছে এবং এর সুবিধা-অসুবিধা তারা নিজেরাই বুঝতে পারতেছে।

এছাড়া বিদেশের অধিকাংশ শপিংমল বা অনলাইন শপিং স্টোরে কার্ড বা বা মোবাইল এপপ্স এর মাধ্যমে পেমেন্ট করার সুবিধা রয়েছে। যার ফলে নগদ টাকার ব্যবহার দিন দিন কমে আসছে। এবং বিভিন্ন ডেভিড এবং ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের অফার দেয় বিভিন্ন অনলাইন শপিং স্টোর গুলো বিভিন্ন অফার দেয় যাতে করে গ্রাহকরা ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে এবং মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন করতে আগ্রহী হয়।

ক্যাসলেস লেনদেন এর অসুবিধার দিক গুলো (Dangers of a cashless society): ক্যাশলেস পদ্ধতিতে লেনদেন করার জন্য আমরা যেরকম ব্যাংক, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও মাস্টার কার্ড এবং বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করি এগুলো হ্যাক হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে যায়। যদিও সকল সে বাদানখালী প্রতিষ্ঠান তাদের সিস্টেম ক্রমান্বয়ে আরো বেশি সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যে সকল কারণে এসব গ্রাহকগণ হ্যাকিং এর শিকার হন তাদের সেসব বিষয় হয় সচেতন করার চেষ্টা করছে।

ভয়ংকর স্পাইওয়্যার বা ভাইরাস পেগাসাস (Pegasus) সম্পর্কে জানুন!

সর্বোপরি যেখানে বহুল সুবিধা রয়েছে সেখানে সমস্যা ও কিছু না কিছু থাকবে। তবে এই ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিপাদ্য টি দৈনন্দিন মানবজীবনে এক বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা করবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url