রচনা সমগ্র - বর্ষাকাল বা প্রিয় ঋতু রচনা

রচনা: বর্ষাকাল
অথবা, বাংলার বর্ষা
অথবা, বর্ষায় বাংলা
অথবা, বর্ষা ও বন্যা
অথবা, বর্ষার বাংলাদেশ

[সংকেত: ভূমিকা-বর্ষার  পল্লী-শহরে বর্ষা-বন্যারূপে বর্ষা-বর্ষার প্রভাব-উপসংহার]
বর্ষাকাল রচনা

ভূমিকা :
কুলায় কাঁপিছে কাতর কপােত,
দাদুরী ডাকিছে সঘনে।
গুরুগুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে
গগনে গগণে।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রকৃতিবক্ষের ঋতুরঙ্গ-নাট্যশালার দ্বিতীয় অঙ্কে রাজার মতাে আবির্ভাব ঘটে বছরের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষার। গ্রীষ্মের দারুণ অগ্নিবাণে বাংলার এ অঞ্চল যখন শুষ্ক, দগ্ধ হয়ে ওঠে, ঠিক তখন নিদাঘ তপ্ত আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ঢেকে যায় গাঢ় কালাে মেঘে। মহাশূন্যের কোনাে এক গুহা থেকে বাঁধনছেড়া বায়ু দুরন্ত বেগে ছুটে আসে। শুরু হয় বর্ষাকাল। প্রবল ধারায় চলতে থাকে বর্ষণ। মাটির তলদেশ থেকে তৃণাঙ্কুর মাথা তুলে উকি মারে । রুক্ষ, শুষ্ক, শীর্ণ তরুলতার অঙ্গে জাগে তারুণ্যের সবুজ শিহরণ । বিচিত্র ফুলের বিকাশে কদম, কেয়া, কামিনী, জুইয়ের আত্ম প্রকাশে দিগদেশ আমােদিত হয়। নয়নরঞ্জন নবীনা বর্ষার এ হচ্ছে আসল রূপ, অনুপম সৌন্দর্যশ্রী।

বর্ষার পল্পী: বর্ষা ঋতুতে পল্লিবাংলা ধারণ করে অসাধারণ মূর্তি। দিগহারা জল ছলছল মাঠে কচি ধানের চারাগুলাে হাওয়ায় দোলে। পাটের চারা গুলাে দাঁড়িয়ে থাকে পানির ওপরে মাথা তুলে। খাল-বিল, নালায় কলকল শব্দে স্রোত বয়ে যায়। নদীতে পালতােলা নৌকা দ্রুত গতিতে ছুটে চলে, গাছে-গাছে শ্যামলিমার সমারােহ। মেঘমেদুর আকাশে স্নিগ্ধ কান্তি, পুকুর পাড়ে কদম-কেয়া ফুলের চিত্তহারা সুরভির অজস্রতা। সবকিছু মিলে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয় যাতে মানুষের অন্তর সাড়া না দিয়ে পারে না। বাঙালি চিত্তে এরূপ বর্ষার প্রভাব অসামান্য। তার স্বাক্ষরও পাওয়া যায় বাংলা কাব্যজগতে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়,

📚 রচনা সমগ্র - ভূমিকম্প

“নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে ওগাে আজ তােরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর
আউশের ক্ষেত জলে ভর ভর কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনায়েছে দেখ চাহিরে।
ওগাে আজ তােরা যাসনে ঘরের বাহিরে।”

শহরে বর্ষা: পল্লীর মতাে শহরে বর্ষা এত রূপ নিয়ে আসে না। শহরে বর্ষা সৃষ্টি করে বিভিন্ন সমস্যা। বিশেষ করে বাংলাদেশের শহরাঞ্জল অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠার কারণে নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। উন্নত পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে ড্রেন ছাপিয়ে পানি শহরের রাস্তায় উঠে যায় । ফলে বিঘ্নিত হয় জনজীবন। এ সুযােগে রিকশা ও স্কুটার চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে। নিত্য প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্রের দাম যায় বেড়ে। সব কিছু মিলিয়ে শহরে বর্ষা আসে অভিশাপ হয়ে।

📚 রচনা- অধ্যবসায়

বন্যারূপে বর্ষা : বর্ষার রূপ শুধু কোমল-মধুর নয়, তার মধ্যে কঠোরতাও আছে, আছে রুদ্রমূর্তি। যাকে বলা হয় বন্যা। বিক্ষুব্ধ বর্ষা অর্থাৎ বন্যার ভয়াল রূপ দেখতেও এদেশের প্রকৃতি প্রেমিক কবিদের কত না আনন্দ।কোমলতায় - কঠোরতায় মিশ্রিত বর্ষার যে রূপ তার সাথে অন্য ঋতুর তুলনাই হয় না। বর্ষার তুলনা শুধু বর্ষাই। বন্যারূপে বর্ষার নির্মমতা অবিশ্বাস্য সত্য। বন্যা তার সাম্যবাদী শক্তি দিয়ে সবকিছু একাকার করে দিয়ে যায়। এখানেই বর্ষার কঠোর রূপের প্রকৃত সার্থকতা।

বর্ষার প্রভাব : বর্ষার প্রভাব খুবই ব্যাপক। বর্ষার বৃষ্টিসিক্ত দিনে মানুষ ভুলে যায় তার কৃত্রিমতা। সে গেয়ে ওঠে মনের অজান্তেই প্রিয় কবিতা অথবা গান। তার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে অতীত স্মৃতির কথা, ফেলে আসা দিনগুলাের কথা। এমন সময় নজরুলগীতি কিংবা রবীন্দ্র সংগীত মন কেড়ে নেয়। মনের অজান্তেই হয়তাে গেয়ে ওঠে কোনাে পথহারা প্রেমিক-

📚 রচনা - বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

“শাওনও রাতে যদি স্মরণে আসে মােরে
বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে ।”

উপসংহার: এত কিছুর পরেও একথা সত্য যে, বর্ষা জীবনে আনে বৈচিত্র্য। তাইতাে বর্ষা কবির ঋতু, সঙ্গীতের ঋতু, চাষির ঋতু, ছুটির ঋতু, অবকাশের ঋতু। গ্রীষ্মের তপস্যার অবসান ঘটে বর্ষার আগমনে। তাইতাে বর্ষাকে এত ভালাে লাগে। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যায়-বর্ষা সবারই প্রিয় ঋতু।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url