ব্লকচেইন ডেভেলপার কোর্স কেন করবো এবং এর সুবিধা, চাহিদা ও ক্যারিয়ার হিসেবে ভবিষ্যত! - Blockchain development guide

আমরা বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং পেশার নাম শুনেছি এর মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি বহুল ভাবে প্রচলিত। এছাড়াও অনেক পেশা রয়েছে এ সেক্টরে! তবে আমাদের আজকের বিষয়টি একটু নতুন এবং যুগোপযোগী। এবং এটি কিছুটা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর ব্যবহার রয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি ব্লকচেইন ডেভেলপার কোর্স বাংলা ইত্যাদির বিজ্ঞাপন। কিভাবে শিখবো ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট আরো কতো কি। আর একারনেই আজকে আমরা আলোচনা করবো ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট (Blockchain development) সম্পর্কে এবং কিভাবে নিজেকে একজন ব্লকচেইন ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।

Blockchain development course Bangla
ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট (Blockchain development) হচ্ছে ব্লকচেইন এর ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়ন করা। এবং এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত একজন ব্যক্তিকে আমরা ব্লকচেইন ডেভলপার (Blockchain developer) হিসেবে জানি। আমরা আজকের আলোচনায় জানবো কিভাবে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্লকচেইন ডেভলপার হিসেবে গড়ে তুলবেন। এবং ক্যারিয়ার হিসেবে ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট কতটা যুগোপযোগী এবং চাহিদা সম্পন্ন পেশা। এবং একজন ব্লকচেইন ডেভলপার হিসেবে আপনার চাহিদা এবং কর্মস্থল সম্পর্কে আলোচনা করব।

তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যারা ব্লক চেইনের ডেভেলপমেন্টের উপর কাজ করে তাদেরকে বলা হয় ব্লকচেইন ডেভলপার। তবে মূল আলোচনায় যাবার আগে আমাদের জানতে হবে ব্লকচেইন আসলে কি?

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি (What is Blockchain) এবং কিভাবে কাজ করে?

আমরা ব্লকচেইন (Blockchain) শব্দটি শুনলেই এর শব্দগত অর্থ খুজে বের করতে পারি। অর্থাৎ ব্লকচেইন শব্দের অর্থ হচ্ছে,"ব্লকের তৈরি চেইন বা শিকল"। ব্লকচেইন হলো লেনদেন এর এমন একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম যা লেনদেন এর নথিপত্র নকল,পরিবর্তন বা হ্যাক করা অসম্ভব। এটি একটি ডিজিটাল লেজার ব্যাবস্থা যা প্রতিটি লেনদেন স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে। এবং লেনদেন এর নথিপত্র সম্পুর্ন কম্পিউটার সিস্টেম এর মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি এবং কিভাবে কাজ করে!

ব্লকচেইন উইকিপিডিয়া

স্মার্ট কন্ট্রাক্ট কি (What is Smart Contract)? স্মার্ট কন্ট্রাক হলো ব্লকচেইন এর মধ্যে সংগঠিত লেনদেন এর ডিজিটাল চুক্তিপত্র। এবং ব্লকচেইন বা ক্রিপ্টোগ্রাফির মধ্যে সম্পন্ন হওয়া সকল লেনদেন গুলো স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়!

ব্লকচেইন প্রধানত ব্যবহার হয়ে থাকে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে। সনাতন পদ্ধতিতে কোন লেনদেন করতে হলে আমাদের মধ্যস্থতাকারীর দরকার হতো। এবং সরকারের অনুমোদন বা ব্যাংকের সাহায্যে লেনদেন করতে হতো ইত্যাদি। তবে ব্লকচেইনের মাধ্যমে আপনাকে লেনদেন করতে কোন প্রকার মধ্যস্থতা কারীর দরকার হবে না। আপনার সম্পূর্ণ লেনদেন টি সংঘটিত হবে ব্লকচেইনের স্মার্ট কনট্রাক্টের (smart contract) মাধ্যমে। এবং আপনার লেনদেনের নথিপত্র ব্লকচেইনের ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা হবে। বর্তমানে সকল প্রকার ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)  এবং অবিনিময়যোগ্য নিদর্শন বা NFT (Non-fungible token) এর লেনদেন হয় এই ব্লকচেইন এর মাধ্যমে।

ব্লকচেইন এর ইতিহাস: সর্বপ্রথম ১৯৯১ সালে স্টাউট হেবার এবং ডব্লিও. স্কট স্টোরন্নিটা এই ব্লকচেইন বা ক্রিপ্টোগ্রাফির ধারনা আবিস্কার করেন। এবং পরবর্তীতে ব্লকচেইন সিস্টেমটি আবিস্কৃত হবার পরে ২০০৮ সালে সাতেশি নাকামোতো (Satoshi Nakamoto) নামক কোন ব্যাক্তি বা দল বিটকয়েন (Bitcoin) নামক একটি ডিজিটাল মুদ্রা আবিষ্কার করেন। যার লেনদেন ব্লকচেইনের মাধ্যমে সংগঠিত হবে।  এবং কোন প্রকার মধ্যস্ততাকারী ছারাই। এবং এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানের হাজারো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির সৃষ্টি হয়েছে। এবং এগুলো সবার নিকট গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।

বিটকয়েন কি এবং কেন-gganbitan

আর ব্লকচেইনের এই জনপ্রিয়তার পেছনের কারণ হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল উপায়ে সব লেনদেন সম্পন্ন করতে সক্ষম। এবং কোন প্রকার মধ্যস্থতাকারির দরকার পড়ে না। এবং এটি অন্যান্য লেনদেন ব্যবস্থার চাইতে অনেক নিরাপদ।

কিভাবে নিজেকে একজন ব্লকচেইন ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলবেন (How to build yourself as a blockchain developer)?

প্রথমে আপনাকে একজন ব্লকচেইন ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (Programming language)  সম্পর্কে দক্ষ হতে হবে। ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্টের জন্য আলাদা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে। তবে এগুলো আবার তৈরি হয়েছে সাধারণ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর মাধ্যমেই। এ কারণে ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট করতে হলে আমাদের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জানা লাগবে।

আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে ব্লকচেইন ডেভেলপার কোর্স বাংলা অথবা ইংরেজি শিখে তাদের Blockchain development roadmap অনুযায়ী কাজ করে সফলতা অর্জন করতে পারেন।

ব্লকচেন ডেভেলপমেন্ট প্রধানত দুইটি ভাগে বিভক্ত Dapps ডেভেলপমেন্ট (Decentralize Application Development) এবং কোর ডেভেলপমেন্ট (Core Development)। ড্যাপ্স (Dapps) ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে ব্লকচেনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার অ্যাপ্লিকেশনকে ডেভলপ করাকে বোঝায়। আর কোর ডেভেলপমেন্ট (Core Development) হচ্ছে ব্লকচেইনের এর নেটওয়ার্ক তৈরি এবং স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ইত্যাদি তৈরি করাকে বোঝায়।

বর্তমান সময়ে ব্লকচেইন দিয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করার জন্য মোট তিনটি ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে। এগুলো হলো- ১: ইথেরিয়াম (Etherium), ২: পলকাডট ( Polkadot), এবং ৩: সোলোনা (Solona) ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে।

ইথেরিয়াম ফ্রেমওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট করা হয়েছে সলিডিটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (Solidity programming language) এর মাধ্যমে আবার সলিডিটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করা হয়েছে C,C++ এবং Python প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে। 

এবং পলকাডট এবং সোলোনা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে রাস্ট প্রোগ্রামিং ভাষায় (Rust Programming Language) দিয়ে। Rust তৈরি করা হয়েছে C,C++ এবং Java প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে।

আপনাকে Dapps ডেভেলপার হতে হলে সলিডিটি (Solidity), জাভাস্ক্রিপ্ট(Javascript), পাইথন (Python) জানতে হবে৷ তাহলে নিজেকে একজন Dapps ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। এবং এ ক্ষেত্রে একজন দক্ষ ডেভেলপার এর চাহিদা প্রচুর পরিমান রয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ সেক্টরে চাহিদা ৫০০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং ভবিষ্যতে ক্রমবর্ধমান ভাবে এ চাহিদা বৃদ্ধি পাবে বলে বলে আশাবাদী প্রযুক্তিবিদরা।

কোর ডেভেলপমেন্ট (Core Development) হচ্ছে তুলনামূলকভাবে জটিল। এখানে আপনাকে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ডেভেলপমেন্ট করতে জানতে হবে৷ এবং জটিল গানিতিক হিসাব নিকাশে আপনাকে পারদর্শী হতে হবে। যেটা আয়ত্ত করা খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং কঠিন কাজ। এখানে আপনাকে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ গুলো ডেভেলপমেন্ট করতে হবে এবং এর মাধ্যমে নতুন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কাজ করতে হবে এটি মূলত নতুন ব্লক চেইন তৈরি করাকে বোঝায়। এছাড়াও এক্ষেত্রে কাজের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকার কারণে প্রতিযোগিতা বেশি।

উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা Dapps ডেভেলপমেন্ট এবং Core ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে সামান্য ধারণা পেয়েছি। এবং এক্ষেত্রে কোন ধরনের কাজ আমাদের করতে হবে এবং চাহিদা কেমন সে সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। তবে আপনাকে এই সেক্টরে কাজ করতে হলে যে সম্পূর্ণ সব বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে এরকম কিছুই নয়।

কারণ কোন ব্যক্তির একার পক্ষে এই সবগুলো কাজ কমপ্লিট করা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেকটি কাজ একটি টিম আকারে করতে হয়। যেখানে কোম্পানি তাদের প্রত্যেকটি কাজের জন্য চাহিদা অনুযায়ী এক্সপার্টদের হায়ার করে। যেমন কেউ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করবে, কেউ সফটওয়্যারটির ব্যাকেন্ড এর কাজ করবে, কেউ ফ্রন্ড সাইডের, কারো কাজ টেস্ট করা ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ একটি টিম আকারে কাজ করে কাজটি পরিপূর্ণরূপের সম্পন্ন করবে তারা। আপনি যেকোন একটি বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেই এই সেক্টরে কাজে নামতে পারেন।

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক একজন ব্লক চেইন ডেভলপারের চাহিদা কেমন এবং বেতন কেমন হতে পারে- আমি প্রথমেই বলেছি একজন ব্লকচেইন ডেভলপারের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী প্রযুক্তিবিদগণ। এর পাশাপাশি একজন ব্লক চেইন ডেভেলপারের বেতন অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় অনেক বেশি। আমেরিকার বাজারে একজন ব্লকচেইন ডেভেলপার এর মান্থলি বেতন বাংলাদেশি টাকায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার উপরে। এবং অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও সামান্য তারতম্য হলেও সকল ক্ষেত্রেই প্রায় সমান।

একজন ওয়েব ডেভেলপার এর ক্ষেত্রে নিজেকে ব্লকচেইন ডেভলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা খুবই সহজ কাজ বলে আমি মনে করি। তার যেহেতু পূর্বেই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে বিস্তর ধারণা রয়েছে তাই সে খুব অল্প সময়ের ভিতরে নিজেকে একজন ব্লকচেইন ডেভলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url