ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা Vr প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual reality - VR) বাংলা অর্থ হলো কৃত্রিম বা অপ্রাকৃত বাস্তবতা। এটিকে সহজ ভাবে বিশ্লেষণ করলেই এর সঠিক অর্থ পাওয়া সম্ভব। ভার্চুয়াল কাকে বলে? ভার্চুয়াল হলো কৃত্রিম বা অপ্রাকৃত। এবং রিয়েলিটি এর অর্থ হলো বাস্তবতা।  অর্থাৎ কোন কল্পনাকে কৃত্রিম ভাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করে সম্পূর্ণ বাস্তবের মত উপস্থাপন করাকে বলা হয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর। এর মাধ্যমে কোন ব্যাক্তিকে সম্পুর্ন কৃত্রিম বাস্তব জগতে প্রবেশ করানো সম্ভব। আসুন জেনে নেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি, এর ব্যাবহার ও সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে!

virtual reality
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
কোনাে একটি ঘটনা সাপেক্ষে মানুষের মন প্রভাবিত হয়। যে ঘটনাটি ঘটে গেল সেটি দ্বারা মন প্রভাবিত হতে হলে হয় অনুভূত হতে হবে- স্পর্শ দ্বারা বা শব্দ শুনে কিংবা দেখে। এই যে স্পর্শ, শােনা কিংবা দেখা এটি মস্তিষ্কে অনুভূতির জন্ম দেয় এবং এর প্রকাশ ঘটে মানুষের আচরণের মাধ্যমে। আচরণিক এ বিষয়টিকে যদি কতগুলাে যন্ত্রের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক তলে দৃশ্যমান করা যায় তাহলে কেমন হয়? এ ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে তা মানুষের কাছে পুরাে পুরি বাস্তব মনে হবে। মানুষ কম্পিউটার আবিষ্কার ও এর পরিচালনার জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে এক নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করেছে।

☑ রোবটিক্স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

একে বলা হচ্ছে কম্পিউটার জেনারেটেড ওয়ার্ল্ড। কম্পিউটার জেনারেটেড ওয়ার্ল্ড তথা হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে কোনাে একটি পরিবেশ বা ঘটনার বাস্তব ভিত্তিক বা ত্রিমাত্রিক চিত্র ভিত্তিক রূপায়ণই হলাে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবে বাস্তবতা। অর্থাৎ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলাে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি কৃত এমন এক ধরনের কৃত্রিম পরিবেশ, যা ব্যবহারকারী-দের কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যাতে তারা এটাকে বাস্তব পরিবেশ হিসেবে মনে করে। এ ক্ষেত্রে যে সকল সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে কয়েকটি হলাে— Vizard, VR Toolkit, 3DSMAX ইত্যাদি।

১৯৩০ সালে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ধারণার সৃষ্টি হয়। ১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগ হতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা শুরু হয়। আইবিএম, অ্যাপল, সিলিকন গ্রাফিক্স-এর মতাে বড় বড় প্রতিষ্ঠান এ ফিল্ডে যথেষ্ট মাত্রায় গবেষণা করছে এবং সাফল্য পাচ্ছে। এরই ফলে বর্তমানে কম্পিউটার নির্ভর গেমগুলাে মিথ্যা (ফলস) ঘােষণা করা হয়েছে। তারা দাবি করছে, এখন এ গেম গুলাের পরিবেশ হবে সত্যিকার আর তা হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কল্যাণে।

☑ ক্রায়োসার্জারি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কম্পিউটারে সংবেদনশীল আবহ তৈরি করার মাধ্যমে বাস্তবের ত্রিমাত্রিক অবস্থা পর্দায় তৈরি করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগৎ তৈরি করা হচ্ছে। অর্থাৎ একটি শক্তিশালী কম্পিউটারে সংবেদন শীল গ্রাফিক্স তৈরির মাধ্যমে বাস্তবের ত্রিমাত্রিক অবস্থা পর্দায় তৈরি করলেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি জগতে প্রবেশ করা হয়। সাধারণ গ্রাফিক্স যা কম্পিউটারে তৈরি করা হয় তার সাথে ভার্চুয়াল জগতের তফাৎ হলাে এই যে এখানে শব্দ এবং স্পর্শকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
VR
Vartual Reality 
এখানে দর্শক যা দেখে তা বাস্তবের কাছাকাছি এনে বােঝার জন্য বিশেষভাবে তৈরি চশমা বা গ্লোভস ব্যবহার করা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে যেসব বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয় তা হলাে-

১. শব্দ- ত্রিমাত্রিক শব্দ উৎপাদন সম্ভব। এতে করে মনে হবে, শব্দ কোনাে বিশেষ স্থান থেকে উৎসারিত হচ্ছে।

২. দৃষ্টি— চশমা কিংবা হেলমেটের মধ্যে ছােট আকারের পর্দা থাকে এবং বহুমাত্রিক ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়।

৩. মস্তিষ্ক-- মানুষের মস্তিষ্কের উপর পরিচালিত গবেষণা কম্পিউটার জেনারেটেড ওয়ার্ল্ডকে নতুন অবয়ব দিয়েছে, যার সাহায্যে তথ্যকে ভালাে ভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।

৪. স্পর্শ— জুতা, গ্লাভস কিংবা শরীরের পােশাক একজন ব্যক্তিকে প্রকৃত অবস্থার কাছা কাছি নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

৫. টেলিপ্রেজেন্স- উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটারে গ্রাফিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক দূর থেকে কাজ পরিচালনা করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। যেমন বৈমানিকরা বাস্তবে আসল বিমান উড্ডয়নের পূর্বেই বিমান পরিচালনার বাস্তব জগৎকে অনুধাবন করে থাকেন।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার ঘটিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বাড়ানাে যায় তেমনি উৎপাদিত নকশার উন্নয়ন ও স্বল্পব্যয়ে সংশ্লিষ্ট পেশা জীবীদের প্রশিক্ষণ নেয়া সম্ভব। বৈমানিকদের বিমান চালনা প্রশিক্ষণ, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক এক্স-রে তৈরি, মনােবিকার গ্রস্ত রােগীর আচরণ ব্যাখ্যা, বিনােদন শিল্পে নতুন মাত্রা যােগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সফল ব্যবহার রয়েছে।

☑ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-র বিস্তারিত আলোচনা

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপাদান :
ক. রিয়েলিটি ইঞ্জিন
খ. হেড মাউন্টেড ইঞ্জিন
গ. অডিও ইউনিট, গ্লাভস ইত্যাদি

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার :

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার অসীম। তবে এর মধ্যে উল্লেখ যােগ্য কিছু ক্ষেত্রের নাম উল্লেখ করা হলাে-
i. শিক্ষায়।
ii. বিনােদনে।
iii. স্বাস্থ্যসেবায়।
iv. ব্যবসায়।
v. বিমান চালনা প্রশিক্ষণে ও নিয়ন্ত্রণে।
vi. খেলাধুলায়।
vii. চলচিত্র নির্মাণে ইত্যাদি।

প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব :

ক. শিক্ষাক্ষেত্রে- শিখন-শেখানাে কার্যক্রমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। জটিল বিষয় গুলােকে সিমুলেশন ও মডেলিং করে শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থাপন করলে তা সহজে উপলব্ধি করে বােঝা যায়। যেমন খাদ্য হতে রক্ত তৈরির মতাে জটিল প্রক্রিয়া বাস্তবে দেখা সম্ভব না হলেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কল্যাণে তা চিত্রা-কর্ষক ভাবে উপস্থাপন করা যায় ।

খ.. চিকিৎসা ক্ষেত্রে-  চিকিৎসা বিজ্ঞান ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের অন্যতম বৃহৎ ক্ষেত্র। জটিল সব অপারেশন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় গুলাের গঠন ও কার্যক্রম, ডিএনএ পর্যালােচনা ইত্যাদি বিষয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কল্যাণে জানা সম্ভব।

গ. প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে- বিমান চালানাে প্রশিক্ষণ, গাড়ি চালানাে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র চালানাে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সিমুলেটর ও মডেলিং সফটওয়ারের মাধ্যমে বাস্তবের ন্যায় প্রশিক্ষণ নেয়া সম্ভব। এতে করে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নেয়ার যে ঝুঁকি তা আর থাকে না। যেমন যখন কোনাে মানুষকে পাইলট হওয়ার ট্রেনিং দেয়া হয়, তখন প্রথমেই তাকে প্লেনে চড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। তাকে এমন একটি পরিবেশে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে সে সত্যিকার প্লেন চালানাের অনুভূতি উপলব্ধি করে। এখানে সময় বদলে দিন, রাত, উচ্চবায়ু চাপ, নিম্নবায়ু চাপ, ঘূর্ণিঝড়, বালিঝড় ইত্যাদি কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে নিরাপদ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

ঘ. ব্যবসায়- বাণিজ্যক্ষেত্রে উৎপাদিত ও প্রস্তাবিত পণ্যের গুণগত মান, গঠন, বিপণন, সম্ভাব্যতা যাচাই, মূল্যায়ন ইত্যাদি জটিল সব কার্যক্রমে সিমুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে কর্মী প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের জুড়ি নেই।

ঙ.প্রকৌশল ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে- গবেষণা লব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন, জটিল অণুর আণবিক গঠন, ডিএনএ গঠন যা কোনাে অবস্থাতেই বাস্তবে অবলােকন করা সম্ভব নয় তা সিমুলেশন পদ্ধতিতে উপস্থাপন ও অবলােকন করা যায়।

চ. বিনােদন ক্ষেত্রে - ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এ ক্ষেত্রেও বেশ সমাদৃত। দ্বিমাত্রিক বা   ত্রিমাত্রিক সিমুলেশন পদ্ধতিতে নির্মিত কোনাে কল্প কাহিনী, পৌরাণিক কাহিনী, কার্টুন, ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র ইত্যাদি মানুষের কাছে বিশ্বাস যােগ্যতা ও গ্রহণযােগ্যতা পেয়েছে। যেমন টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার দৃশ্য।


☑ ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

এ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক প্রভাব লক্ষ করা যায় এবং দিন দিন এর ব্যবহার ও প্রয়ােগক্ষেত্র বেড়েই চলেছে।

এ জগৎটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে। যারা সমর্থন করতে পারছেন না তারা বলছেন, এর ব্যাপক প্রয়ােগ মানুষের মূল্যবােধের অবক্ষয় ঘটাবে। যেমন মনুষ্যত্ব হীনতা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির একটি নেতিবাচক প্রভাব । কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছে মতাে বিচরণ করার কারণে বাস্তবের সাথে তার দূরত্ব তৈরি হবে। ফলে সে মানুষের ভালােবাসার চেয়ে ভাচুয়াল রিয়েলিটিতে সৃষ্ট ভালােবাসায় বেশি আকৃষ্ট হবে যা কোনােভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সৃষ্টিতে সহায়ক প্রযুক্তিসমূহ স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

তবে এতটুকু বলা যায়, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মানুষ এবং মেশিনের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন নতুন মাত্রা যােগ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে চন্দ্র থেকে মঙ্গল পর্যন্ত অভিযানে।
Next Post Previous Post
2 Comments
  • Md Mijanur Rahaman (MR)
    Md Mijanur Rahaman (MR) ১৭ জুন, ২০২০ এ ১১:৩৩ PM

    Your site is beautiful to look at and the articles are also very useful. Thank you very much.
    You Can see our article .
    MR Laboratory
    How to lock facebook profile
    Top 5 ways to earn income online
    How to Install the Yoast SEO Plugin for Blogger Blog । SEO Tricks
    YouTube's secret tips and tricks. Best Hacks for You
    https://www.mrlaboratory.info
    4

    • তিমন দে
      তিমন দে ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩ এ ১০:২৩ PM

      ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর কমেন্ট করার জন্য 🥰

Add Comment
comment url